সম্প্রতি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা উদ্ভাবন হয়েছে স¦ল্প খরচ ও জলবায়ু সহনশীল একুয়াফনিক্স পদ্ধতি। যা বাংলাদেশের মৎস্য খাতে এক নতুন প্রযুক্তি। সাধারণত মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ করা হয় এই পদ্ধতিতে। বিশ্বে একুয়াফনিক্স নিয়ে অনেক গবেষণা চললেও বাংলাদেশে প্রথম গবেষণা করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এটি একটি সম্বন্বিত চাষ পদ্ধতি। অল্প জায়গায় সম্বন্বিত মাছ ও সবজি চাষ করার কারনে এর রয়েছে অনেক অর্থনৈতিক গুরুত্ব। বাংলাদেশের ভূমিহীন মানুষেরাও নদীতে এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে সচ্ছলতা অর্জন করতে পারে। আমাদের দেশের পুকুরের পাড়গুলো সবজি চাষের উপযোগি না সেক্ষেত্রে পুকুরের মাঝে এ প্রযুক্তিতে অধিক সবজির ফলন পাওয়া সম্ভব। একুয়াফনিক্স বাড়ির সৌন্দর্য্যওে রাখতে পারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।
একুয়াফনিক্স এর উন্নত গবেষণার জন্য সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ওয়ার্ল্ড ফিস বরিশাল এর এআইএন প্রোজেক্টে ছয়মাস একুয়াফনিক্স নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণার মাধ্যমে গবেষকরা উদ্ভাবন করেছেন আরো উন্œত, স্বল্প খরচ ও জলবায়ু সহনশীল একুয়াফনিক্স। গবেষণার তত্ত্বাবধান করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল ও মেরিন ফিসারিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহমুদুল ইসলাম। গবেষণার প্রোজেক্ট ম্যানেজার ছিলেন জাকির হোসেন এবং প্রধান গবেষক আতিকুর রহমান সানী। এছাড়া সহকারী গবেষক হিসেবে নাঈমুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান গবেষণা করেন।
প্রধান গবেষক আতিকুর রহমান সানী জানান, আমাদের উদ্ভাবিত একুয়াফনিক্স খুব অল্প খরচে স্থাপন করা সম্ভব। বর্তমানে আমাদের দেশে যে একুয়াফনিক্স প্রযুক্তি আছে তা স্থাপন করতে প্রায় দশ হাজার টাকা দরকার হয়। কিন্তু আমাদের গবেষণায় উদ্ভাবিত একুয়াফনিক্স মাত্র এক থেকে দেড় হাজার টাকা দিয়েই স্থাপন করা সম্ভব। এই প্রথম কোনো একুয়াফনিক্সে একই সাথে মাছ, সবজি ও কবুতর থাকছে যার মাধ্যমে চাষি অর্থনৈতিকভাবে বেশী লাভবান হবে।
আতিকুর রহমান জানান, গবেষণা খাঁচায় পরীক্ষামূলক তেলাপিয়া ও কৈ মাছ চাষ করা হয়। খাচার উপর ফুলগাছ, বিভিন্ন ধরনের শাক এবং সবজি যেমন: মরিচ, বরবটি, শিম, শসা, ধুন্দুল ইত্যাদি চাষ করা হয়। তারই সাথে কক্শীট দিয়ে তৈরী বাসায় কবুতর লালন পালন করা সম্ভব হয়েছে। এর মাধ্যমে অল্প খরচে ও অল্প জায়গায় মাছ, পর্যাপ্ত সবজি এবং কবুতরের বাচ্চা ও ডিম পাওয়া সম্ভব হবে।
উদ্ভাবিত এই একুয়াফনিক্স এ লাগবে তিন থেকে চারটি বাঁশ যা দিয়ে পাচঁ ফুট বাই সাত ফুটের খাঁচা বানাতে হবে। মশারির জাল দিয়ে হাপাঁ প্রস্তুত করতে হবে। খাঁচাটিকে পানিতে ভাসাতে ১৫ থেকে ২০টি বোতল দরকার হবে। এবং কক্শীট দিয়ে কবুতরের বাসা বানিয়ে স্থাপন করতে হবে।
গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ড. মুহাম্মদ মাহমুদুল ইসলাম জানান, পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। যার প্রভাব আমাদের দেশেও পরছে। প্রতি বছর ঝড়, জলোচ্ছাস আঘাত হানছে। বেড়ে চলছে সমুদ্রের উচ্চতা। যার সবচেয়ে বেশী প্রভাব পরছে আমাদের দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারনে প্রায়ই ভেসে যায় উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর পুকুরে চাষকৃত মাছ। তাই খাঁচায় চাষের এই একুয়াফনিক্স পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে উপকূলীয় অঞ্চলের চাষীদের কাছে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলেও খাচাঁ থেকে মাছ চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম রয়েছে। তাই চাষীরা একুয়াফনিক্স পদ্ধতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ভেসে যাওয়া মাছের লোকসানের ঝুঁিক থেকে অনেকটা মুকÍ থাকতে পারবে । সাথে সাথে একই জায়গায় পছন্দ মাফিক শাক-সবজি লাগাতে এমনকি কবুতর লালন পালন করতে পারবে। সেত্রেক্ষে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরন করে অবশিষ্ট মাছ ও শাক-সবজি বিক্রি করে পারিপারিক স্বচ্ছলতায় একুয়াফনিক্স উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। বিজ্ঞপ্তি