কাজিরবাজার ডেস্ক :
কামারুজ্জামানের পর এবার জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পালা। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চূড়ান্ত শুনানি শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে তার মামলাটি। মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত দুটি মামলা এখন আাপল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায়। এর মধ্যে প্রথমটি মুজাহিদের। এর পর আসবে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা পলাতক জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকারের মামলাটি।
মুজাহিদ ও খোকন রাজাকার-দু’জনেই কাকতালীয়ভাবে ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা, তাদের যুদ্ধাপরাধের ঘটনাস্থলও ফরিদপুর। তবে আলবদরের কেন্দ্রীয় দ্বিতীয় শীর্ষনেতা হওয়ার কারণে ঢাকাসহ দেশজুড়ে বিস্তৃত ছিল মুজাহিদের অপরাধের ক্ষেত্র।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আসা ৭টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার মধ্যে তিনটির চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়েছে এবং দু’টির আপিল শুনানি শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। বাকি দুই আপিল মামলার আসামীরা ট্রাইব্যুনালের দণ্ড ভোগরত অবস্থায় স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করায় তাদের আপিল অকার্যকর হয়ে গেছে অথবা হতে যাচ্ছে।
অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া হয়েছে ১১টি মামলায় ১২ যুদ্ধাপরাধীর রায় আর চারজনের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়ে রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী তাদের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলেও সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার প্রেক্ষিতে আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।
এ আপিল মামলা দু’টির শুনানি শুরুর দিন ধার্যের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের ১৫ জুলাই ট্রাইব্যুনাল-২ এর রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মুজাহিদের আপিল শুনানি আগে শুরু হবে। পরে শুরু হবে গত বছরের ১ অক্টোবর প্রথম ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া সাকা চৌধুরীর আপিল শুনানি। তারা দু’জন আপিল করেন যথাক্রমে গত বছরের ১১ আগষ্ট ও ২৯ অক্টোবর।
২০১২ সালের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, দেশান্তরে বাধ্য করাসহ বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে বুদ্ধিজীবী সুরকার আলতাফ মাহমুদ, বদি, ও রুমিকে হত্যাসহ ৫টিই প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
অন্যদিকে ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয়, যার মধ্যে ৯টিই প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে। সেগুলোর মধ্যে শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ চারটি হত্যার দায়ে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার দুই ঘাতক চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান প্রথম থেকেই পলাতক থাকায় আপিল করেননি তারা।
আর সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জন জামায়াতের নায়েবে আমির মতিউর রহমান নিজামী ও কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী আপিল করার সুযোগ পাবেন যার যার মামলার রায় ঘোষণার এক মাসের মধ্যে।
মুজাহিদের পর খোকন রাজাকার : দুই ট্রাইব্যুনালে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে আরও ৪ অভিযুক্তের। এ চারটি মামলার রায় ঘোষণা অপেক্ষাধীন (সিএভি)।
এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী রায়টি ঘোষণা করবেন ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা পলাতক জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকারের মামলার। এ রায় ঘোষণা গত ১৭ এপ্রিল থেকে অপেক্ষমান রয়েছে ট্রাইব্যুনাল-১ এ। গত বছরের ৯ অক্টোবর খোকনের বিরুদ্ধে ১৬ জন নারী ও শিশুসহ ৫০ জনকে হত্যা, তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা, ২ জনকে ধর্ষণ, ৯ জনকে ধর্মান্তরিত করা, ২টি মন্দিরসহ ১০টি গ্রামের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, সাতজন গ্রামবাসীকে সপরিবারে দেশান্তরে বাধ্য করা ও ২৫ জনকে নির্যাতনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি মানবতাবিরোধী অভিযোগ আনা হয়। পলাতক এই আসামীর অনুপস্থিতিতেই তার বিচার এবং রাষ্ট্রীয় খরচে আসামিপক্ষের আইনজীবী নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল।
অন্যদিকে গত ২ জুন বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মোবারক হোসেনের মামলার, যিনি স্বাধীনতার পরে জামায়াতের রোকন ছিলেন। ওই দিন তার মামলার রায় ঘোষণা অপেক্ষমান রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। গত বছরের ২৩ এপ্রিল হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অপহরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫টি অভিযোগে অভিযুক্ত হন মোবারক হোসেন।
জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সাবেক এমপি সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলার রায়ও অপেক্ষমান। আটক হয়ে জামিনে থাকলেও বিচারিক প্রক্রিয়া শেষের দিন গত ২০ আগষ্ট কায়সারকে কারাগারে পাঠিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-২। গত ২ ফেব্র“য়ারি কায়সারকে গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি এবং ধর্ষণের দু’টিসহ মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হলে রায় ঘোষণা অপেক্ষমান রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। গত বছরের ১২ নভেম্বর গণহত্যা, হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অপহরণ, গুরুতর জখম, অগ্নিসংযোগ ও সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হন আজহার।