স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটের বালাগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী হাসান মিয়া (২৮) হত্যার দায়েরকৃত মামলায় পিতা ও দুই ছেলেকে মৃত্যুদন্ড (ফাঁসি) দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দÐপ্রাপ্ত আসামীদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক সৈয়দা আমিনা ফারহিন এ রায় ঘোষণা করেন। ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) মো. সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বালাগঞ্জ উপজেলার হাসামপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মবশ্বিরের ছেলে আব্দুস সবুর পুতুল (৫৫), তার ছেলে ফাহাদ আহমদ রাহী (২৩) ও আব্দুল মোমিন রনি (২৫)। রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী আব্দুস সবুর পুতুল উপস্থিত থাকলেও অপর সাজাপ্রাপ্ত তার দুই ছেলে ফাহাদ আহমদ রাহী ও আব্দুল মোমিন রনি পলাতক ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, বালাগঞ্জ থানার হাসামপুর বায়তুননুর জামে মসজিদে তারাবির নামাজের পর মুসল্লিদের মধ্যে লিচুর জুস সরবরাহ করতেন হাসান মিয়া। সরবরাহকৃত জুসের মূল্য পরিশোধ করতেন মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ফারুক মিয়া। হত্যাকাÐ সংগঠিত হওয়ার রাত ১০টা ১০ মিনিটে ফারুক মিয়া লিচুর জুসের মূল্য বাবদ ২৫০০ টাকাসহ অগ্রিম আরও ২৫০০ টাকাসহ মোট ৫ হাজার টাকা বিবাদী রাহীর মাধ্যমে হাসানের কাছে পাঠান। কিছুক্ষণ পর রাহী লিচুর জুস সরবরাহ করা লাগবে না বলে টাকা ফেরত নিতে হাসামপুর গ্রামস্থ হাসামপুর মোহাম্মদিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা মার্কেটের হাসান ফার্মেসী এন্ড ভেরাইটিজ স্টোর এর মালিক হাসান মিয়ার কাছে আসেন। কিন্তু টাকা ফেরত নিতে ফারুক মিয়াকে এসময় ফোন করতে বলেন ব্যবসায়ী হাসান মিয়া। তখন রাহী হাসানকে গালিগালাজ করেন। এসময় রাহীর পক্ষ নিয়ে অন্য আসামিরাও তাকে কিলঘুষি মারেন। একপর্যায়ে রাহী তার হাতে থাকা ছুরা দিয়ে হাসানের ডান কনুইয়ের নিচে, ডান বগলের নিচে, কোমরে, পেটের বামপাশসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয় লোকজন মূমূর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসান মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই হোসাইন আহমদ সাহান বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে বালাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ৪ (২৩-০৫-২০১৮)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিলেট জেলা পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুদীপ দাস তদন্ত করে ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর ৩ আসামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-৫৭) দাখিল করেন। পরে ২০১৯ সালের ১১ জুন আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন (অভিযোগগঠন) করে আদালত এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী পর ২৪ সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সোমবার আদালত ফাহাদ আহমদ রাহী, তার ভাই আব্দুস মোমিন ও তার পিতা আব্দুস সবুর পুতুলকে১৯৬০ সালে পেনাল কোড এর ৪৪৮/৩০২/১০৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে মৃত্যুদÐ ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমনা করে এ রায় প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মো. আল আসলাম মুমিন ও স্ট্রেট ডিফেন্স অ্যাডভোকেট ফারজানা হাবিব চৌধুরী মামলাটি পরিচালনা করেন।