আওয়ামী লুটপাট ও বিশৃংঙ্খলা রোধে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেই

2

সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে বালু-পাথর লুটপাট ও সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-ভাংচুরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরাসরি অংশগ্রহণ থাকার পরও বিএনপি নেতাদের ওপর এর দায় চাপানো হচ্ছে। এসব লুটপাট ও অপকর্ম রোধে প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর।
মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেল করে তিনি এসব অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পলায়নের পর সবাই যখন ঘর থেকে বের হয়ে উল্লাস করছে তখন ফ্যাসিবাদের দোসররা সন্ত্রাসী হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে।’
আলী আকবর আরও বলেন, ‘কিছু দুষ্কৃতকারী বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছে, লুট করেছে। ঠিক তখন উপজেলা বিএনপি দলের পক্ষ থেকে মাইকিং করে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বেঠক করে অপতপরতা রোধে সহায়তার জন্য ১৫ সদস্যের একটি স্বেচ্ছাসেবক তালিকা দেওয়া হয়।’
হামলা-ভাংচুর ও লুটপাটে আওয়ামী নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কিভাবে উপজেলা প্রশাসনে অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে এবং রেলওয়ের সম্পত্তি লুট হচ্ছে, কিভাবে আনসারদের অনুপস্থিতিতে এলাকায় পতিত স্বৈরাচারের দোসররা লুটতরাজে ব্যস্ত তা আমরা লিখিতভাবে তথ্যপ্রমাণসহ প্রশাসনকে জানিয়েছি।’
আইনশৃংখলাবাহিনীর অনুপস্থিতিতে আওয়ামী দোসররা অরাজকতা এবং লুটপাট করলেও এখন সবকিছুর দায় বিএনপি নেতাদের ওপর চাপানো হচ্ছে জানিয়ে আলী আকবর বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন যারা কোম্পানীগঞ্জের লুটপাটের রাজত্বে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সহায়তা করেছেন সেসব লোকেরা মিডিয়ায় নানা বিভ্রান্তি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করছেন। সে সব সংবাদ আওয়ামী নেতাদের বক্তব্যের বরাতে ছাপানো হচ্ছে। এতে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছেন।’
গণমাধ্যমকে তথ্যনির্ভর ও সঠিক সংবাদ পরিবেশনের আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি একটি জাতীয় গণমাধ্যমে বিএনপি নেতাদের অভিযুক্ত করে যে সংবাদ ছাপানো হয়েছে তাতে কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা শামীম আহমদের ভাতিজা যুবলীগের নেতার শাফাতের বক্তব্য ছাপানো হয়েছে। অন্য যাদের নাম এ নিউজে এসেছে তারা সবাই আওয়ামী লুটপাটপাটকারীদের দোসর। এ থেকে প্রমাণ হয় স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের অপকর্ম বিএনপি নেতাদের ওপর চাপাতে পরিকল্পিতভাবে এমন কাজ করছেন।’
বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে এমন ষড়যন্ত্র চলছে। তাই, প্রকৃত অপরাধীদের দ্রæত গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি আলী আকবরের।
তিনি আরও বলেন, গত ৬ জুন শামীম আহমদ ও তার লোকজন উপজেলা প্রশাসনের অফিস ভাংচুর ও লুটপাট করেছিলেন। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। এ ব্যাপারে শামীমের নাম উল্লেখ করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় উপজেলা পরিষদের সিএ ফাইজুর রহমান বাদী হয়ে একটি জিডি করেছেন। যাতে শামীমের নাম উল্লেখ রয়েছে।
পতিত সরকারের পলায়নের পর কোম্পানীগঞ্জের পিয়াইন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনেও আওয়ামী নেতাকর্মী ও তাদের দোসরদের হাত রয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের পুলিশ সুপার ও সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপারগণ সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে পিয়াইন নদীন সীমানা পরিদর্শন করে সাফ জানিয়ে দিয়ে আসেন কেউ যেন নির্ধারিত সীমানার বাইরে বালু উত্তোলন না করেন। এরপরও বালু উত্তোলন হতে থাকে। ২৩ সেপ্টেম্বর কোম্পানীগঞ্জ ও ছাতক উপজেলার মধ্যবর্তী পিয়াইন নদীর বালু মহালের সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্ভে করে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সীমানা পিলার দেওয়া হয়েছে। তা সত্তে¡ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি মহল।’
তার অভিযোগ, লম্বাকান্দি চৈলতার ঢালা নামের একটি নতুন বালু মহাল থেকে রাতের আধারে শত শত নৌকা দিয়ে বালু তুলছে ফ্যাসিস্ট ও লুটপাটকারীদের দোসররা। স্থানীয় চাটিবহর গ্রামের সুজন মিয়া নামের এক ব্যাক্তি পিয়াইন নদীর বালু উত্তোলনের লিজ পেলেও তিনি এর দুই কিলোমিটার বাইরে বালু তুলতে থাকেন। এতে শস্যক্ষেত্রসহ ফসলী ও শিমুলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। সমাজসেবী উসমান খান থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এলাকায় শৃংখলা ফেরাতে দুই জেলার প্রশাসন সেখানে জরিপ করে সীমানা আলাদা করে দেন। যৌথবাহিনী গিয়েও এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে।
এসব কারণে উপজেলা বিএনপির বাণিজ্য বিষয়ক উসমান খানসহ প্রতিবাদকারীদেরকে সুজন ও তার সহযোগীরা বিভিন্নভাবে জানমালের ক্ষতি করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে, বারবার আবেদন নিবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০ সেপ্টেম্বর সিলেটের জেলা প্রশাসন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি এক মতবিনিময় সভা করেন। সেখানে তিনি ঘোষণা দেন ভোলাগঞ্জ রূপওয়েসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় শিঘ্রই আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধে যৌথ বাহিনী অভিযান চালাবেন। রেলওয়ের সম্পত্তির নিরাপত্তায় আনসার নিয়োগ করা হবে। কিন্তু অদ্যাবদি কিছুই হয়নি। ফলে লুটপাট অব্যাহত রয়েছে।
তিনি জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাহাব উদ্দিন, জেলা যুবদলের সহসভাপতি সাজ্জাদ হোসেন দুদুসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের নামে সবধরনের অপপ্রচার বন্ধের জন্য দাবি জানান।
একইসঙ্গে লুটপাট ও বিশৃংখলা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপি নেতা আলী আকবর বলেন, অন্যথায় ফ্যাসিবাদের দোসররা আবার এলাকার মানুষের ঘাড়ে চেপে বসবে। অরাজকতা চালাবে। আর সেই দায় বিএনপি নেতাদের ওপর চাপাবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী সাহাব উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট ফরহাদ খন্দকার, ফখরুল ইসলাম ও মনির হোসেন, সাাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল মুত্তাকিন বাদশা, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জুয়েল আহমদ, বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক উসমান খা, উত্তর রনিখাই ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আলী আহমদ, উপজেলা যুবদল আহবায়ক সাজ্জাদ হোসেন দুদু, যুগ্ম আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন ও রজন মিয়া প্রমুখ।