শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আরেক ব্যবসায়ী। তিনি শ্রীঙ্গলের নিউ মার্কেটের স্বত্বাধিকারী আবিদুর রহমান চৌধুরী সোহেল।
মঙ্গলবার দুপুরে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তিনি এসব অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভুগী চট্টগ্রামের পাহাড়তলী উপজেলার জামদু মিয়ার ছেলে ব্যবসায়ী মো. সেলিম মিয়া।
লিখিত বক্তব্য সেলিম মিয়া বলেন, ‘ প্রায় এক বছর পূর্বে রাতের আধারে জীপ বোঝাই করে লোকজন নিয়ে এসে চোকিদারকে মারপিট আমার ক্রয়কৃত ৮৬ শতাংশ জমি দখল করেন। আমি শ্রীমঙ্গল ভ্রমন করার সুবাদে শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য ভালোলাগা থেকে এখানে পর্যটনখাতে বিনিয়োগ করতে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ২৯ তারিখে মোহাজিরাবাদ মৌজায় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদের রাস্তার পাশে – জসিম উদ্দিন গংদের কাছ থেকে রেজিষ্ট্রি দলিলে ১২৩ শতাংশ জমি ক্রয় করি, যার দলিল নং-৭০১৮/২৩। জমি ক্রয়ের পূর্বে আমার পাশের জমির মালিক শ্রীমঙ্গল নিউ মার্কেট এর ব্যবসায়ী আবিদুর রহমান চৌধুরীর সাথে আলোচনা করি। এসময় তিনি কোন আপত্তি না করলেও জমি কেনার পর তিনি প্রথমে দুই দাগে ৮৬ শতাংশ জমি দাবি করেন ও পরে দখল করে নেন। কোটি টাকা বিনিযোগে কেনা এই জমি উদ্ধারে জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন জায়গায় ধরণা দিয়ে কাজ হয়নি।
সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর শ্রীমঙ্গল পৌরসভায় সেনা ক্যাম্প স্থাপন হলে সেখানে অভিযোগ দায়ের করি। সেনা ক্যাম্প কর্তৃক অভিযোগটি আমলে নিয়ে শুনানীর জন্য পরদিন ১৪ আগষ্ট উভয় পক্ষকে ডেকে পাঠান। পরদিন উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সার্ভেয়ারকে দুই পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখার দায়িত্ব দেন। শুনানীর এক পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা তৎকালীন শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। পরে কাগজপত্র যাচাই ও ভানু লাল রায় বক্তব্য শুনে সেনা কর্মকর্তা জমির দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য আবিদুর রহমান সোহেলকে নির্দেশ দেন। তবে আবিদুর রহমান চৌধুরী জমির দখল ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর সেনাবাহিনী থেকে জমির মালিকানা যাচাই করার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) অফিসে অভিযোগটি প্রেরণ করেন। এর ধারাবহিকতায় এসিল্যান্ড অফিস থেকে উভয় পক্ষকে এসিল্যান্ড অফিসে ডেকে পাঠানো হলে আর্মি অফিসারগণ এবং উভয় পক্ষ এসি ল্যান্ড অফিসে হাজির হলে এসিল্যান্ড সাহেব সবার উপস্থিতিতে বলেন- সকল কাজগপত্র যাচাই বাছাই করে বলেন, নামজারী খতিয়ান, অনলাইন খাজনা, দলিল দাগ সবকিছু পর্যালোচনা করে দেখা যায় এই জমিটির মালিক মো. সেলিম মিয়া। এসময় আবিদুর রহমান সোহেলকে বিভিন্ন মামলার অজুহাত দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়’।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘প্রতিপক্ষের অব্যাহত হুমকির মুখে ১লা সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল থানা ও ২ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগ করার খবর জানতে পেরে আবিদুর রহমান সোহেল ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ও আমার ব্যবসায়িক অংশিদারদের নানা ভাবে হয়রানী শুরু করে। এর অংশ হিসেবে আবিদুর রহমান চৌধুরী মিথ্যা অভিযোগ করে আমার বিরুদ্ধে ৪ সেপ্টেম্বর একই দিনে মৌলভীবাজার আদালতে পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন’।
‘শ্রীমঙ্গল থানার এসআই মো. কামরুল হোসাইন ভুমির প্রকৃত মালিকানা যাচাই করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ১৭ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) বরাবর আবেদন করেন। সেমতে উপজেলা ভুমি অফিস যথাযত প্রক্রিয়ায় ভুমির মালিকানা সংক্রান্ত প্রতিবেদন থানায় জমা দেয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা সেই প্রতিবেদনের আলোকে ৯অক্টোবরের এর মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। কিন্তু ভুমি অফিসের ‘মালিকানা যাচাই প্রতিবেদন’ প্রেরণের পূর্বেই তদন্ত কর্মকর্তা অদৃশ্য কারণে ২০ সেপ্টেম্বর একটি মনগড়া প্রতিবেদন আদলতে প্রেরণ করেন। প্রতিবেদনের কোথাও ভুমির মালিকানা যাচাই ও জরিপ করার কথা বলা হয়নি’।
তিনি বলেন, ‘এনিয়ে আমি ২৪ সেপ্টেম্বর উপজেলা ভুমি অফিসে যোগাযোগ করলে ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার আমাকে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে জায়গা সার্ভে করার নিমিত্তে উপস্থিত থাকতে বলেন। তবে ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার আমাকে জানিয়ে দেন- তাদের না জানিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
জানতে আবিদুর রহমান সোহেল জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ২৫ দাগের মালিক এবং সেলিম মিয়া ৬৪ দাগের জমির মালিকানা নিয়ে ট্রাইবুনালে মামলা চলছে। তিনি আরও বলেন, তাদের নামজারী বাতিলে জন্য আদালতে মামলা চলমান। মামলা নং-১০/২২। এরআগে ২০১৭সালে আরেকটি মামলা হয়।