সিলেট ও সুনামগঞ্জে একদিনে বজ্রপাতে ৭ জনের মৃত্যু

4

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেট ও সুনামগঞ্জে একদিনে চার কৃষক ও এক কিশোরসহ সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুরে তীব্র খরতাপের পর ঝড়ো বৃষ্টি চলাকালে বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে সিলেটের জৈন্তাপুর ২ জন, গোয়াইনঘাটে ১ জন, কোম্পানীগঞ্জে ১ জন, কানাইঘাটে ২ জন এবং সুনামগঞ্জে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বজ্রপাতে নিহতরা হলেন, সিলেটের কানাইঘাটে উপজেলার দলইমাটি গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে নুরুদ্দিন (৬০) ও লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের কেওটিহাওর গ্রামের আব্দুল মিয়ার ছেলে কালা মিয়া (২৮), পাশ্ববর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার নিজ জৈন্তাপুর ইউনিয়নের আগফৌদ গ্রামের নূরুল হকের ছেলে নাহিদ আহমদ (১৩), একই ইউনিয়নের ভিত্রিখেল বড়বন্দ গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে আব্দুল মান্নন মনই (৪৫), সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের সিরাজপুর চরপারা গ্রামের মৃত সলতু মিয়ার ছেলে দ্বীন ইসলাম (৬৫), গোয়াইনঘাটে ভিত্রিখেল হাওর গ্রামের রাজ্জাক মিয়ার স্ত্রী রুকসানা বেগম (৪৭) এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পুটামারা গ্রামের সুরফান মিয়ার ছেলে নেজামুল হক (২১)।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, বজ্রপাতে মারা যাওয়া দু’জন পেশায় কৃষক। শনিবার দুপুরে ঝড়োবৃষ্টির সময় পৃথকস্থানে বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়।
এদিকে, জৈন্তাপুর উপজেলায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তন্মধ্যে আব্দুল মান্নান মাঠে কাজ করছিলেন। আর নাহিদ বাড়ির পাশেই একটি স্থানে দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় বজ্রপাতে প্রাণ হারান।
জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম (ওসি) বলেন, বজ্রপাতে নিহতদের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে লাশ সুরতহাল প্রস্তুত করা হয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া ঘটনাটি দুঃখজনক উল্লেখ করে গণমাধ্যমকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বজ্রবৃষ্টি চলাকালে সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দেন।
এদিকে, গোয়াইনঘাটে বজ্রপাতে শনিবার দুপুর পৌনে একটায় বজ্রপাতে ভিত্রিখেল হাওর গ্রামের রাজ্জাক মিয়ার স্ত্রী রুকসানা বেগম (৪৭) বজ্রপাতে অজ্ঞান হন। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই সময় বজ্রপাতে আহত হন নিয়াগোল গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে ইসমাইল আলী (১৮)। তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন।
দুর্যোগ ও ত্রাণ শাখার কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি শুনেছি, খবর নেয়া হচ্ছে। এসময় ঝড়ে ঘরবাড়ি রাস্তাঘাটে বাঁশ ও গাছপালা উপড়ে পড়ে যান চলাচলে বিঘœ ঘটে। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
অপরদিকে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে নেজামুল হক (২১) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার ইছাকলস ইউনিয়নের পুটামারা (পশ্চিম পাড়া) গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নেজামুল পুটামারা গ্রামের সুরফান মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দুপুর ২টার দিকে নেজামুল বাড়ির পাশের হালছাবড়া হাওর থেকে হাঁস নিয়ে বাড়িতে আসার সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এসময় সে গুরুতর আহত হয়। আসেপাশে থাকা অন্য লোকজন থাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। কোম্পানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক ও ইউনিয়ন বিট অফিসার মনজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া একইদিনে দুপুরে সুনামগঞ্জে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের সিরাজপুর চরপারা গ্রামে বজ্রপাতে মারা যান দ্বীন ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সময় নিজ বাড়ির সামনে চারা জমিতে লাকড়ি তুলতে যান দ্বীন ইসলাম। এসময় বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কালাম হোসেন বলেন, বাড়ির সামনে চারা জমিতে রোদে দেওয়া লাকড়ি শুকাতে দিয়েছিলেন দ্বীন ইসলাম। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়াতে শুকনো লাকড়িগুলো তুলতে গেলে আকস্মিক বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। আমরা প্রতিবেদন ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। নিহতের পরিবার সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পেতে পারেন। অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ঠেকাতে করণীয়: মৌসুমের এই সময়ে বজ্রপাত বেশি হয়। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের শাহ মো. সজিব আহমদ বলেন, এ মাসে বজ্রবৃষ্টির আরও পূর্বাভাস রয়েছে। সাধারণত এই সময়ে বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি। তাই অসচেতনায় যেনো একটি প্রাণ না ঝরে। এজন্য সবাইকে সচেতনতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, বজ্রপাতের মেঘ হয় কালো রঙের। বজ্রপাতের মেঘ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। এটা দেখলে নিরাপদে যেতে হবে। এটা সিজনাল মেঘ বা বৃষ্টি ভাবার অবকাশ নেই। পূর্বাভাস জানতে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকলে আবহাওয়া অফিসের নাম্বারে যোগাযোগ করা যায়। সে পর্যন্ত পৌছানো না গেলেও নিজেরা কালো মেঘ দেখলে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়াটা জরুরী। প্রাণ বাঁচাতে একে অন্যকে সচেতন করতে হবে।