কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি
পর্যটনের শুরু থেকে আওয়ামিলীগের প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছে ভোলাগঞ্জ গ্রামের আলমগীর হোসেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারেননি। পর্যটনের ব্যবসায়ী পাথর ব্যবসায়ী কিংবা ট্রাক সব জায়গা থেকে চাঁদা নিতেন তিনি।
ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটনের সরকারি জায়গায় নির্মিত প্রতিটি দোকান থেকে ২-৪ হাজার টাকা মাসিক চাঁদা ভোলাগঞ্জ দশ নম্বর এলাকার বোল্ডার পাথর ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা এবং এই পাথর বহনকারী ট্রাকের আকার বেধে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছে সে। জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির রামরাজত্ব তৈরি করা আলমগীরের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই মামলা হামলা কিংবা মারধরের শিকার হতেন। আওয়ামিলীগ সরকারের পতন হলেও থেমে নেই তার চাঁদাবাজি। সাদাপাথর পর্যটনের এক ব্যবসায়ী তাকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ঐ ব্যবসায়ীকে মারধর ও মোটরসাইকেল ভাংচুর করেছে সে। এ ঘটনা ঐ ব্যবসায়ী তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়াও সাদাপাথর লুটপাট করায় মঙ্গলবার পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে। তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন পর্যটনের ব্যবসায়ীরা। তারা চাঁদাবাজ মুক্ত করে ব্যবসার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ইউএনও’র হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সাদাপাথর পর্যটনের ব্যবসায়ীরা মঙ্গলবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানার বরাবর এই অভিযোগটি দেন। অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিনে তদন্ত করতে সাদাপাথর পর্যটন বাজারে যান তিনি। এসময় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেন এবং নির্দেশ দেন তারা যেন কাউকে চাঁদা না দেয়।
অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে সাদাপাথর পর্যটন এলাকার সরকারি খাস জমি থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ ভোলাগঞ্জ গ্রামের আলমগীর হোসেন ও তার দলবল চাঁদাবাজি করে আসছে। গত ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত প্রায় ৪ বছর থেকে সে পর্যটনের ব্যবসায়ীদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিটি দোকান থেকে চাঁদা আদায় করেছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ‚্যত্থান পরবর্তী সময়ে সরকারি খাস জমিতে আর চাঁদা দেবে না বলে প্রতিবাদ করলে চাঁদাবাজ আলমগীর তার সঙ্গীয় দলবল নিয়ে পর্যটনের ব্যবসায়ীদের উপর হামলা করে। চাঁদা না দেওয়ায় গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সাদাপাথর পর্যটন এলাকার বন্ধু কসমেটিক্স শপের ব্যবসায়ী ও সাদাপাথর ব্যবসায়ী সমিতির দপ্তর সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম খোকনের উপর হামলা করে আলমগীর ও তার দলবল। এসময় আশরাফুল ইসলাম খোকন আহত হয় এবং তার মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। এ ঘটনায় আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এর আগেও আলমগীর হোসেনকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় সে তার দলবল নিয়ে পর্যটন এলাকার দোকানপাট ভাংচুর করে। দীর্ঘদিন থেকে তার এই চাঁদাবাজীতে পর্যটন এলাকার ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ।
ব্যবসায়ীরা জানান আলমগীর হোসেনকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে সে যে কারো উপর হামলা চালায়। দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামিলীগের প্রভাব খাটিয়ে সরকারি খাস জমিতে নির্মিত পর্যটনের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে আসছে আলমগীর হোসেন। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে মারধর ও দোকানপাট ভাংচুর করে সে। এ বিষয়টি প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে।
এদিকে থানায় দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয় ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম খোকনকে মারধর করে তার মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। তখন তার দোকানের ক্রয়-বিক্রয়ের টাকা ছিনিয়ে নেয় সে।
চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আলমগীর হোসেনের ফোনে কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সাদাপাথর পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সফাত উল্লাহ বলেন আমাদের পর্যটনের ব্যবসায়ীকে মারধরের বিষয়টি ইউএনও’র কাছে লিখিত ভাবে বলেছি। তাছাড়া চাঁদাবাজি বন্ধের জন্যও আমরা সবাই দাবি জানিয়েছি। ইউএনও ও আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন কেউ চাঁদাবাজি করতে আসলে তাকে বেঁধে রাখবেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদিউজ্জামান জানান, মামলা দায়ের করেছেন ওই ব্যবসায়ী। আমরা এর সাথে জড়িতকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছি। তদন্ত করছি এখানে কারা চাঁদাবাজি করে। আমিতো নতুন আসছি এখানে। এর আগে এরকম অভিযোগ শুনিনি। তবে এখন শুনতেছি এরকম অভিযোগ।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা জানান, পর্যটনের দোকানপাট সরকারি জায়গায়। এখান থেকে কেউ চাঁদাবাজি করার সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি তারা যাতে কাউকে চাঁদা না দেয়।