কাজির বাজার ডেস্ক
দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর মামলা লড়ে গত বুধবার ১৪ আগস্ট মেয়র হিসেবে জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ফারুক আহমদ। এর আগের দিন রবিবার ১৩ আগস্ট শপথ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শপথ নেয়ার মাত্র ৫ দিনের মাথায় বহুল কাঙ্খিত সেই চেয়ার ছেড়ে দিতে হলো তাকে। সোমবার ১৯ আগস্ট নির্বাহী আদেশে মেয়র পদ থেকে তাকে অপসারণ করা হয়।
জানা যায়, ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আহাদকে দুই হাজার ৮৩ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করেন তৎকালীন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদমান সাকীব। ঘোষিত ফলে নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদ দুই হাজার ৮১ ভোট পান। ফল ঘোষণার পরপরই অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে ফারুক আহমদ আবারও ভোট গণনার দাবি জানান। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি মৌখিক ও লিখিতভাবে আবেদন করেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। তবে অভিযোগ পেয়েও রিটার্নিং কর্মকর্তা আমলে নেননি। ভোটের পরদিন নির্বাচন কমিশনেও ভোট পুনর্গণনা চেয়ে লিখিত আবেদন করেন ওই প্রার্থী। পরে হাইকোর্টে ফারুক আহমদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি তুলে ধরে ফলাফলের গেজেট স্থগিত ও ভোট পুনর্গণনার আবেদন করেন। রিট আবেদনের পর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শেষে ওই বছরের ১৪ ফেব্রæয়ারি এই নির্বাচনে মেয়র পদের ফল ও গেজেট স্থগিত করে একমাসের মধ্যে ভোট পুনরায় গণনার নির্দেশ দেন।
তবে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিজয়ী মেয়র আব্দুল আহাদ আপিল করলে হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত হয়ে যায়। ফলে মেয়র পদে আব্দুল আহাদ ২০২১ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি গেজেট পেয়ে ২৩ ফেব্রæয়ারি শপথবাক্য পাঠ করে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরে পরাজিত মেয়র প্রার্থী ফারুক আহমদ হাইকোর্টে করা রিট প্রত্যাহার করে একই বছরের ৯ মার্চ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সিলেটে ওই পৌরসভার ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রগুলোর ব্যালট ফের গণনা করে মেয়র পদে ফল বাতিল করে তাকে নির্বাচিত করার জন্য মামলা করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল আবেদনকারীর সাক্ষী ও বিবাদীপক্ষের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করে যুক্তিতর্ক শেষে ভোট পুনরায় গণনার আদেশ দেন।
ওই আদেশের পর তিন ধাপে ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ, ৫ জুন ও ৫ জুলাই বিচারকের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের আইনজীবীকে সামনে রেখে ট্রাইব্যুনালে ভোট গণনা করা হয়। তখন উভয়পক্ষের আইনজীবীর মতামত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এবং ভোট পুনর্গণনায় দেখা যায়, পরাজিত ফারুক আহমদ দুই হাজার ৭১ ভোট এবং আব্দুল আহাদ দুই হাজার ৬৫ ভোট পান। আব্দুল আহাদের চেয়ে ছয় ভোট বেশি পাওয়ায় ফারুক আহমদকে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সিলেটের বিচারক আরিফুজ্জামান ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৯ অক্টোবর আব্দুল আহাদ আপিল আদালত সিলেটে আপিল মামলা করেন। শুনানি শেষে চলতি বছরের ৫ জুন আদালতের বিচারক এবং জেলা ও দায়রা জজ এ কিউ এম নাছির উদ্দীন দরখাস্তকারী আব্দুল আহাদের আপিল আবেদন নামঞ্জুর করে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় বহাল রেখে আদেশ দেন। ওই আদেশের পর জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদের গেজেট প্রদান কার্যক্রমে আর বাধা না থাকায় নির্বাচন কমিশন সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে আব্দুল আহাদের নামে প্রকাশিত গেজেট বাতিল করে ফারুক আহমদকে তার মনোনয়নপত্র অনুসারে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে।
এ বিষয়ে ফারুক আহমদ বলেন, জনগণের রায়কে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর জনগণের রায়ের প্রতিফলন হয়েছে। এবার শুনলাম স্থানীয় সরকারের মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশের পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করা হয়েছে। সেই আদেশ অনুসারে আমাকেও অপসারণ করা হয়েছে। আসলে বিষয়টি বড়ই কষ্টকর।
প্রসঙ্গত, সারা দেশের ৩২৩টি পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করা হয়েছে। সোমবার ১৯ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানিয়েছে সরকার। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এতদ্বারা স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) অধ্যাদেশ ২০২৪ এর ধারা ৩২ (ক) প্রয়োগ করে বাংলাদেশের নিম্নবর্ণিত পৌরসভার মেয়রগণকে স্ব-স্ব পদ থেকে অপসারণ করা হলো। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌর-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।