বন্যাকবলিতদের রক্ষায় সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে

15

 

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। বন্যা এখন প্রতিবছরের অনিবার্য চিত্র হয়ে উঠেছে। একবার নয়, বছরে কয়েকবার করে ডুবছে অনেক এলাকা। জমির ফসল, পুকুরের মাছ, গবাদি পশুÑসব কেড়ে নিচ্ছে বানের পানি।
নদীভাঙন কেড়ে নিচ্ছে ঘরবাড়ি, জমিজিরাত। ফলে প্রতিবছর বহু মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। সরকারি ভাষ্যেই বলা হচ্ছে, চলতি বছরের বন্যায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ১৫টি জেলা বন্যায় কমবেশি আক্রান্ত হয়েছে। জেলাগুলো হলো সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, গাইবান্ধা, ফেনী, রাঙামাটি, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট ও কক্সবাজার। এর মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জ এ বছর তিন দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত এলাকার পরিধি ক্রমেই বাড়ছে।
আবহাওয়া বিভাগ মনে করছে, চলতি মাসের শেষ দিকে ফের দেশের বিভিন্ন এলাকায় মধ্যমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশে অন্য সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে যত ক্ষতি হয়, শুধু বন্যায় তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার আঘাত প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে। এর প্রধান কারণ, আমাদের নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া। বৃষ্টির পানি ও উজান থেকে আসা ঢলের পানি নদী দিয়ে নামতে না পারায় সেই পানি সমতল ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
অতীতেও বড় বন্যা হতো, কিন্তু সেটি হতো ১০ থেকে ২০ বছর পর পর। এখন প্রায় প্রতিবছর এবং বছরে কয়েকবার বড় বন্যা হয়। ক্ষয়ক্ষতিও অনেক বেশি হয়। এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় দ্রæত নদীগুলো খনন করা। জানা যায়, ব্রিটিশ আমলেও এ দেশের নদীগুলো নিয়মিত খনন করা হতো। অথচ তখন ভ‚মিক্ষয় ও নদী ভরাট হতো অনেক কম। এখন উজানের পানি যেমন আসছে, তেমনি দেশে বেড়েছে ভ‚মিক্ষয় ও নদীতে পলি জমার প্রক্রিয়া। পাকিস্তান আমলে এ দেশে নদী খননের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় এখানে কোনো ড্রেজারই ছিল না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার প্রথম চারটি ড্রেজার সংগ্রহ করে। সর্বশেষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কয়েক ডজন ড্রেজার সংগ্রহ করেছে। তা দিয়ে নদী খননের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নদী খননের গতি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বন্যা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের নদী খননের গতি বাড়াতেই হবে।
উপর্যুপরি বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির যে চিত্র উঠে আসছে, তা রীতিমতো ভয়াবহ। জমির ফসল, পুকুরের মাছ, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কেবল ছয়টি জেলায় ২২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় নদীভাঙনে শত শত পরিবার সর্বস্ব হারিয়েছে। শত শত কিলোমিটার সড়ক ও বহু ব্রিজ-কালভার্টের ক্ষতি হয়েছে। ১০ জেলায় এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ আরো অনেক রোগব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বন্যার মোট ক্ষয়ক্ষতি এরই মধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় বন্যাকবলিতদের রক্ষায় সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। ত্রাণ, পুনর্বাসন ও চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে।