স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটে আবারও বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এমন পূর্বাভাস দিয়েছে।
সম্প্রতি দফায় দফায় বন্যা ও জলাবদ্ধতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সিলেটের। এরই মধ্যে আবারও বন্যার খবরে জনজীবনে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। সবচেয়ে বেশি আশঙ্কায় রয়েছেন সুনামগঞ্জের বাসিন্দারা। ভাটি অঞ্চল হওয়ায় সুনামগঞ্জে এর আগেও কয়েক দফা বন্যা হয়। ব্যাপক ক্ষতি হয় তাতে।
পাউবো জানিয়েছে দেশে ও উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাত বেড়ে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আজ শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল বাড়ছে, যা ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী তিনদিনে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীসমূহের পানির সমতল বাড়তে পারে। এ সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, পুরাতন-সুরমা, সারিগোয়াইন নদীর পানির সমতল দ্রæত বেড়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেওয়া এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানির সমতল স্থিতিশীলভাবে বাড়তে পারে। তবে এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় পানির সমতল বিপৎসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই।
গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল স্থিতিশীলভাবে বাড়তে পারে। তবে পানির সমতল বিপৎসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই। ঢাকার চারপাশের নদীসমূহের পানির সমতলও স্থিতিশীলভাবে বাড়তে পারে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই।
ঈদুল আজহার রাত থেকে শুরু করে টানা কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিলেটে দেখা দেয় বন্যা। এতে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েন মানুষজন।
সম্প্রতি কয়েক দফা বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ২৫০ কিলোমিটার সড়কও বন্যার পানিতে নিমজ্জিত ছিল। এতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও এলজিইডির আওতাধীন প্রায় সাড়ে ৭ হাজার রাস্তা ও সড়কের মধ্যে বন্যায় ১৬০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে তাদের প্রয়োজন ১১৯ কোটি টাকা। গোয়াইনঘাট, সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে আরএইচডির আওতাধীন ৫৪৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩৯ দশমিক ৯ কিলোমিটার ছিল পানিতে নিমজ্জিত। এতে ক্ষতি সারতে প্রাথমিকভাবে ৩১ কোটি ২২ লাখ টাকার প্রয়োজন বলে দাবি করেছে আরএইচডি। দীর্ঘ মেয়াদে প্রয়োজন ২৭১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
এদিকে মৌলভীবাজারের জুড়ী নদী ছাড়া সবগুলো নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লোকালয় থেকে পানি নামছে। নদী তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামের ঘর-বাড়ি ছাড়া বন্যাপীড়িত মানুষ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে জেলার সীমান্তঘেঁষা জুড়ী নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ১৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে হাকালুকি হাওররের পানি ধীর গতিতে কমছে। এ কারণে বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলার হাওরপারের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানির জিম্মিদশা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষ খাদ্যসংকটের সঙ্গে সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির সমস্যায় ভোগছেন। সীমান্তবর্তী জুড়ী নদীর পানি হাকালুকি হাওরে পতিত হয়। ফলে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত এ নদীর পানিতে ভাসছে হাকালুকি হাওরের মানুষ। হাওরপারের কুলাউড়ার ভুকশীমইল, বরমচাল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, জুড়ীর পশ্চিম জুড়ী, জায়ফরনগর, গোয়ালবাড়ি, বর্ণি, তালিমপুর, দাশেরবাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের শতশত গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। এতে হাওরপারের বন্যাপীড়িত মানুষ বানের পানি কবল থেকে রেহাই পাননি।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি ধীর গতিতে কমায় হাকালুকি হাওরের পানি শ্লথ গতিতে কমছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কুশিয়ারা ও সুরমা নদী ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় নিতে সিলেট থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।