স্টাফ রিপোর্টার
সিলেট নগরীর তালতলা, শাহপরান ও দোয়ারাবাজার এলাকা থেকে ৩ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে পৃথক স্থান থেকে এসব লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে রয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেনের এক কর্মচারী, শাহপরান লাল খাঁটঙ্গী মাদানি মসজিদের এক মুয়াজ্জিন ও সালিশ ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।
জানা গেছে, সিলেটে নগরীর ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বোরহান উদ্দিন (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখায় সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর তালতলা ভিআইপি রোডের সুরমা টাওয়ার থেকে লাফ দিয়ে তিনি মারা যান। তবে ঘটনার সময় একটি মেয়ে সেখানে উপস্থিত ছিল। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। নিহত বোরহান উদ্দিনের ঠিকানা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেনি পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছু বুঝে ওঠার আগেই বোরহান নামের ওই যুবক ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নীচে পড়ে যান। ঘটনার আকস্মিকতায় একটি মেয়ে ঘটনাস্থলে জ্ঞান হারায়। তবে মেয়েটির সঙ্গে ছেলের সম্পৃক্ততা ছিল কিনা, তা কেউ বলতে পারেন নি।
সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঈন উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ বলছেন ছেলেটি ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। আবার কেউ বলছেন ১০ তলা ভবনের ৫ তলা থেকে পড়ে মারা গেছেন। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, লাশের সঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখার একটি আইডি কার্ড পাওয়া গেছে। তবে তার সম্পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে, সিলেটের শাহপরান এলাকায় ঘরের দরজা ভেঙে এক মুয়াজ্জিনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের পাশে পাওয়া গেছে একটি চিরকুট। যেখানে লেখা ছিল ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’। মঙ্গলবার সকালে এ লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত মুয়াজ্জিন মো. দেলওয়ার হোসাইন দিলাল (১৯)। তিনি শাহপরান থানার শাহপরান লাল খাঁটঙ্গী মাদানি মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। তিনি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রামনগর গ্রামের মো. মুসলিম আলীর ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ফজরের নামাজের সময় শাহপরান লাল খাঁটঙ্গী মাদানি মসজিদে আজান না হওয়ায় মুসল্লিরা গিয়ে মুয়াজ্জিনের থাকার কক্ষে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে মুয়াজ্জিনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। কক্ষের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া ছিল সেই লাশটি। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করে।
শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, কী কারণে এই মুয়াজ্জিন আত্মহত্যা করেছেন তা এখনো জানা যায়নি। তিনি একটি কাগজে লিখে রেখে গেছেন- তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। লাশের ময়না তদন্ত হচ্ছে, এটা শেষ হলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
অপরদিকে, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে চেলা নদী থেকে সালিশ ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাঈন উদ্দিন (৫৫) এর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মাঈন উদ্দিন উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের চাইরগাও গ্রামের মৃত আব্দুল মতলিবের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নস্থ চেলা নদীর রহিমেরপাড়া ভাঙাবাড়ি এলাকায় স্থানীয়রা মাঈন উদ্দিনের ভাসমান লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। এদিকে গত রবিবার সন্ধ্যা থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তিনি নিখোঁজ ছিলেন বলে নিশ্চিত করেন নিহতের পরিবারের লোকজন। অপরদিকে তিনি এলাকার একজন সালিশ ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন ব্যবসা ও সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান। এছাড়া প্রায় বছর ছয়েক আগে নিজ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে তিনি সম্মানজনক ভোট পান বলে স্থানীয়রা জানান। তবে স্থানীয়ভাবে মৃত্যুর সঠিক কোনো কারণ জানা না গেলেও এটিকে রহস্যজনক মৃত্যু বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
দোয়ারাবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সামসুদ্দিন জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টে মৃতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এছাড়া ভাসমান অবস্থায় নিহতের হাতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ও জুতা ঝুলে থাকতে দেখা যায়। তবে ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। সেইসাথে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।