হবিগঞ্জ সংবাদদাতা
হবিগঞ্জে হত্যাকাÐের ২১ বছর পর মামলায় জনের মৃত্যুদÐ (ফাঁসি) ও ১০ জনের যাবজ্জীবন কারাদÐের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আজিজুল হক এ দÐাদেশ প্রদান করেন। পাশাপাশি দÐপ্রাপ্ত প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ২২ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদÐপ্রাপ্তরা হলেন- হবিগঞ্জ সদর উপজেলার হুরগাঁও গ্রামের জামাল মিয়া, মিলন মিয়া, ফজল মিয়া, কুতুব আলী, রফিক মিয়া, জাকির হোসেন ও আব্বাছ উদ্দিন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- একই গ্রামের সায়েদ আলী, মিজাজ আলী, মতলিব মিয়া, কুতুব উদ্দিন, কালাম মিয়া, জিয়াউর রহমান, আয়াত আলী, ইছাক আলী জজ মিয়া ও ইব্রাহিম মিয়া।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রæয়ারি আসামিরা একই গ্রামের হারুন আহমেদকে পূর্ব শত্রæতার জের ধরে রাস্তায় একা পেয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন আসামীরা। এ ঘটনার পর নিহতের ভাই সুমন আহমেদ বাদী হয়ে ওই বছরের ১৫ ফেব্রæয়ারি হবিগঞ্জ সদর থানায় ৪৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশ একই বছর তদন্ত করে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। রাষ্ট্রপক্ষে ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে আসামিদের উপস্থিতিতে আদালত রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সালেহ আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর আদালত হত্যাকাÐের রায় প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীর মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি। রায়ে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করেছি।
নিহতের ছেলে রাহাত আহমেদ জানান, ২১ বছর আমার বাবার হত্যাকাÐের বিচার পেয়েছি। তিনি দ্রæত সময়ের মধ্যেই রায় বাস্তবায়নের জন্য দাবি জানান।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আত্মীয়স্বজনরা জানিয়েছেন, রায়ে তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শিগগিরই উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
এদিকে, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে স্কুলছাত্র তানভীর হত্যা মামলায় ৩ জনের ফাঁসির আদেশ প্রদান করেছেন আদালত। এছাড়া আরও একজনকে ৩ বছরের কারাদÐের আদেশ প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট দ্রæত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক স্বপন কুমার সরকার আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় প্রদান করেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামিকে ১ লক্ষ করে টাকা জরিমানা এবং অপর জনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম নছরতপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে উজ্জ্বল মিয়া (২৫) ও নূরপুর গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে শান্ত (২৬) ও বাছিরগঞ্জ বাজারের জলিল কবিরাজের ছেলে জাহিদ মিয়া (২৮)। এছাড়া ৩ বছরের কারাদন্ডপ্রাপ্ত হচ্ছেন- মরমা গ্রামের মৃত মরম আলীর ছেলে লিমন।
সিলেট দ্রæত বিচার ট্রাইবুনালের পিপি সরোয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আসামিরা পরিকল্পনা করে তানভীরকে হত্যা করে তার লাশ পুঁতে রেখেছিল। আদালতে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের নসরতপুরের বাসিন্দা তানভীর হোসেন নিখোঁজ হন। এরপরই তার বাবার কাছে ৮০ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি করে আসামীরা। এ ঘটনায় অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশ আসামিদেরকে আটক করলে তারা তানভীরকে হত্যা করে পুকুরে পুতে রাখা হয়েছে বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
পুলিশ অনুসন্ধানে জানা যায়, ছয় বছর আগে তানভীরের বাবার কাছে অপমানিত হন মামলার আসামী উজ্জ্বল মিয়া ও তার বাবা। এ ঘটনার পর প্রবাসে চলে যান উজ্জ্বল। ছয় বছর পর ২০২১ সালে দেশে ফিরে প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পনা করেন উজ্জ্বল মিয়া। পরিকল্পনা অনুযায়ী তানভীরকে ডেকে গ্রামের পুকুরপাড়ে নিয়ে আসেন আসামি শান্ত। পরে শান্ত ও জাহিদ তানভীরকে ধরে রাখেন ও উজ্জ্বল তানভীরের গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে লাশ পুকুরে কাঁদার মধ্যে চাপা দেন। ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তানভীরের বাবার মুঠোফোন নাম্বারে কল দিয়ে মুক্তিপন দাবি করা হয় বলেও পুলিশের অনুসন্ধানে উঠে আসে।
আদালতের কাছে স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২১ জনের সাক্ষীর মাধ্যমে তাদের দোষ প্রমানিত হওয়ায় মঙ্গলবার সিলেট দ্রæত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক স্বপন কুমার সরকার উপরোক্ত আসামীদেরকে এ দÐাদেশ প্রদান করেন।