আলবিদা মাহে রমজান, স্বাগত ঈদুল ফিতর

4

শাহিদ হাতিমী

পবিত্র রমজান শেষ। দেখতে দেখতে, পড়তে পড়তে, চলে গেলো রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের দিনগুলো। আজ আর খোশ আমদেদ নয়, এখন বলতে হবে আলবিদা মাহে রমজান। আজ ২৯ রমজান, আজকের দিনশেষে চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল এক মুসলমান অপর মুসলমানকে জানাবো ঈদ মোবারক আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ, এবার আমরা প্রতিদিন দৈনিক কাজির বাজার পত্রিকার পাঠকদের সামনে সময়োপযোগী করে রমজান ও রোজা সংশ্লিষ্ট ইসলামিক কলাম বা ফিচার নতুন নতুন শিরোনামে তুলে ধরেছি। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকার ইচ্ছে রয়েছে, আপনাদের পাশে থাকা চাই। আমরা রমজান মাসের পরিপূর্ণতা লাভে ৩০টা চাই রোজা, তাই হোক, মহান আল্লাহ কবুল করুন।
আমরা কী পেরেছি রামাজানের শিক্ষাকে কাজে লাগাতে? ফিতরা আদায় করেছেন তো? নতুবা ফিতরা আদায়ের জন্য নিশ্চয় সকলেই প্রস্তুতি নিয়েছেন! দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর এখন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর অত্যাসন্ন। ঈদ-উল-ফিতর মানে রোজা শেষে রব প্রদত্ত মহান আনন্দ উৎসব। স্বাগতম বছরের প্রথম ঈদ। আলবিদা মাহে রমজান, খোশ আমদেদ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। বিগত একমাস ধরে সিয়াম সাধনার মধ্যে দিয়ে রোজাদার যে কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছে, আজ তা থেকে উত্তীর্ণের সময় ক্রমেই ঘনিয়ে এসেছে। চতুর্দিকে তাই আজ ঈদের আমেজ সুস্পষ্ট।
ঈদ-উল-ফিতরের দিবস হচ্ছে ইয়াওমুল জায়েযা বা পুরস্কারের দিন, আত্মোপলব্ধির দিন। সমাজ ও যুগের নানা অবক্ষয়ের ছোঁয়ায় ঈদের অনুষ্ঠানেও নানা অতিরঞ্জিত বিষয় ও বাড়াবাড়ি দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসে পড়েছে। আমাদের এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে মহানবী সা. এর প্রবর্তিত পবিত্র ঈদের শিক্ষা ও বরকত হতে আমরা বঞ্চিত না হই। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. ঈদ-উল- ফিতরের নির্মল শিক্ষায় উজ্জীবিত হওয়ার জন্য প্রত্যেককেই ঈদগাহে সমবেত হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এদিন তিনি দুস্থ এতিম যুদ্ধাহত পরিবারের সদস্যদের কাছে টানতেন। যিকর আজকার ও ফজরের জামাত সমাপ্তির পর গোসলের মাধ্যমে পাক পবিত্র হয়ে আতর সুঘ্রাণে সুশোভিত হতেন। গ্রহণ করতেন মিষ্টি জাতীয় পানাহার। অন্যদেরও এতে শামিল করতেন। নগর জীবনের সংকীর্ণতা ও সীমাবদ্ধতায় আজ আমরা সর্বস্তরের মানুষদের দিয়ে ঈদ করার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছি।
এক সময় ছিল ধনী-গরিবে কোলাকুলি। এখন হয়েছে ধনীতে ধনীতে কোলাকুলি, গরিবে গরিবে কোলাকুলি। সমতার ঈদ যেন অসম প্রাচীর হয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়, যা সত্যিই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আসুন না সকলে এ বিভেদ প্রাচীর অস্বীকার করি, মিশে যাই ধনী গরিব এ পাড়া ও পাড়া, সোসাইটি ও লোকালয়, শহুরে ও গাঁওয়ের জাতিধর্ম নির্বিশেষে একে অপরের সাথে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও নবীজী এদিন ঈদের জামাতে এক রাস্তা দিয়ে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতেন। তার এটাই প্রত্যাশা, আসা যাওয়ার মধ্যে অতিরিক্ত বা বেশি মানুষের সাথে তার সালাম কালাম ও কুশল বিনিময় হবে। এমন ঈদ উদযাপনে গর্বিত হয়ে তিনি উচ্চারণ করতেন : লিকুল্লি কাওমিন ঈদ ওয়া হাযা ঈদুনা। প্রত্যেক জাতিরই কোন না কোন খুশির দিন রয়েছে আর এ হলো আমাদের আনন্দোৎসব, মুসলমানদের ঈদ।