জমিতে ধানের থোড়, আকাশ মেঘলা আশা-নিরাশায় হাওরাঞ্চলের কৃষককূল

36

মো. শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরজুড়ে সবুজের সমারোহ। জমিতে ধানের থোড় বের হয়েছে। কোন কোন জমির কাচা ধানে চাল হয়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও অল্প হলেও ধান পাকতে শুরু করেছে। দু এক জায়গায় ধান কর্তনেরও খবর পাওয়া গেছে। ২৯ মার্চ শুক্রবার এমন চিত্র দেখা যায় হাওরাঞ্চলে। জমিতে ধানের থোড় ও আকাশ মেঘলা। যা দেখে বুক ক্ষেপে উঠে। রীতিমতো আশা-নিরাশার দোলাচলে দিন কাটছে কৃষকদের।
জানাগেছে, এবার জগন্নাথপর উপজেলার সবচেয়ে বড় নলুয়ার হাওর ও মইয়ার হাওর সহ ছোট-বড় সকল হাওর এবং বাওরে ২০ হাজার ৩৮৫ হেক্টর বোরো জমি আবাদ করা হয়েছে। এবার অনেক পতিত জমিও আবাদের আওতায় আসে। জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর কৃষি বিপ্লব ঘটাতে আন্তরিকভাবে কাজ করেন। সরকারি ভাবে বিনামূল্যে সার-বীজ সহ কৃষি উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে জমি আবাদে প্রান্তিক কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়। এতে এগিয়ে আসেন দরিদ্র পরিবারের বর্গাচাষী কৃষকেরা। ফলে আবাদি জমির পরিমাণ বেড়ে যায়। মাঠ দিবস সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে অল্প জমিতে বেশি ধান উৎপাদনে করণীয় বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়। একই সঙ্গে রোগবালাইমুক্ত পুষ্টফলন পেতে থোড় ধানের প্রয়োজনীয় যতœ নিতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাবে প্রচারণা করা হচ্ছে।
এনামুল হক, ছইল মিয়া, আছলম উদ্দিন, নোয়াব উল্লাহ, খোকন বিশ্বাস, রজনী কুমার দেব, বসন্ত পাল সহ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের ছোট-বড় কৃষকদের মধ্যে অনেকে বলেন, জমিতে থোড় ধান ঝলমল করছে। আর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই ধান কাটতে পারবো। মনে অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করছি কবে ধান কাটবো। আবার ভয়ও করে দিনের বেশির ভাগ সময় থাকে আকাশ মেঘলা। কখন যে কি হয় জানিনা। অকাল বন্যা ও শিলাবৃষ্টির মতো অজানা আতঙ্ক সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়ায়। যদিও জমিতে এবার ভালো ফসল হয়েছে। প্রকৃতি অনুক‚লে থাকলে বাম্পার ফলন কৃষকদের গোলায় উঠবে বলে সচেতন মহলের অনেকে জানান।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ জানান, এবার ২০ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ হাজার ৪৩২ মেট্রিকটন ধান। তিনি বলেন, ধান রোপন থেকে শুরু করে কর্তন পর্যন্ত আমরা কৃষক ভাইদের সব ধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি। এবার তুলনামূলক ভালো ফলন হয়েছে। তবে কর্তনের আগ পর্যন্ত শঙ্কা থেকেই যায়। বোরো হচ্ছে প্রকৃতি নির্ভর ফসল। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জগন্নাথপুর উপজেলা কর্মকর্তা সবুজ কুমার শীল জানান, হাওরের ফসল রক্ষায় ইতোমধ্যে বেড়িবাঁধের কাজ শেষ হয়ে গেছে। ফসল নিয়ে ভয়ের কারণ নেই। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, বোরো ফসল উৎপাদন ও সুরক্ষায় কৃষি, পাইবো সহ আমরা সবাই মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করছি। এখন শুধু ফসল ঘরে তোলার পালা। বড় ধরণের কোন দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার ফলন কৃষক ভাইদের গোলায় উঠবে।
এদিকে-উপজেলার দাস নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য অনিল চন্দ্র দাস জানান, অল্প হলেও হাওরে ধান কর্তন শুরু হয়েছে। এমন খবরে কৃষক সহ সব মহলে কিছুটা হলেও স্বস্তি বিরাজ করছে।