বেড়েছে সব পণ্যের দাম, অসহায় ক্রেতা

18

কাজির বাজার ডেস্ক

বাজার শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। তারপরও সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দাম। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের মুরগির ডিমের দামও বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। এদিকে পেঁয়াজ, আলু, রসুনের পাশাপাশি ভালো নেই মাছ, মুরগি ও মাংসের বাজারও। গত সপ্তাহে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৫০ টাকা বেড়েছে। মুরগি ও বিভিন্ন প্রকার মাছের দামও বেড়েছে। এতে একদিকে যেমন ক্রেতারা অসহায় আত্মসমর্পণ করছেন অপরদিকে প্রতিদিনকার খাবার তালিকা থেকেও পুষ্টিবঞ্চিত হচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। মূল্যবৃদ্ধির এই জালে অনেক পরিবার সুষম ও পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণ কমিয়ে এনেছেন। খরচ বাঁচাতে নিয়েছেন নানা কৌশল।
একইভাবে বাজার ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন চিত্র দেখা যায়। গত সপ্তাহে ৫৯৫ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে কেজি প্রতি ৫৫ টাকা বেড়ে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর স্বপ্নসহ অন্যান্য সুপারশপগুলোতে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬৯৯ টাকায়। এছাড়া গত সপ্তাহে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া লেয়ার মুরগি কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গত সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা কেজি দরে সোনালি মুরগি বিক্রি হলে এ সপ্তাহে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বড় সাইজের রুই মাছ কেজিপ্রতি ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের রুইয়ের কেজি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা এবং ছোট সাইজের রুই মাছ কেজিপ্রতি ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট রুই মাছ গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে বড় সাইজের রুই মাছের দাম। অপরিবর্তিত দামে বিক্রি হচ্ছে চিংড়িও। এছাড়া গত সপ্তাহে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মাঝারি সাইজের চিংড়ি এ সপ্তাহেও ৬০০ টাকা কেজিতে মিলছে। তবে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা কমে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে মাঝারি সাইজের ইলিশ। বড় সাইজের পাঙাশ ১৮০ ও ছোট সাইজের পাঙাশ ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে সিলভার কার্প, কাতল, তেলাপিয়া ও সরপুঁটির দাম। বড় সিলভার কার্প প্রতি কেজি ২৬০ টাকা, বড় সাইজের কাতল মাছ ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা এবং বড় সরপুঁটি ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এক ক্রেতা বলেন, মানুষের জীবনযাত্রায় একটা বড় পরিবর্তন আসছে। তবে সেটি যত ইতিবাচক তার চেয়ে বেশি নেতিবাচক। গত দুই বছরে আমার প্রতিষ্ঠান আমার বেতন বাড়ায়নি অথচ এই দুই বছরে বাজারে পণ্যের দাম কিন্তু বসে নেই। মাছ, মাংস, সবজি, আলু, পেঁয়াজ কিছুতেই হাত দেয়া যায় না। বাজারের কথা শুনতেই মনে একটা ভয় কাজ করে। নূর আলম বলেন, উপায় না পেয়ে অনেক নীতি অবলম্বন করতে হচ্ছে। আগে মাসে ৪ কেজি পেঁয়াজ লাগলেও এখন দুই কেজিতে মাস পার করতে বলছি। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার গরুর মাংস খেলেও এখন মাসে এক দুইবার খাই। একই অবস্থা বাকিসব ক্ষেত্রেও। আর কত সংযত হলে দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙবে, বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ ক্রেতা। বাজার করতে আসা রফিক মৃধা বলেন, কিছু বলেই কিছু হয় না। যা হওয়ার তা হবেই। যে যেভাবে পারছে মেরে খাচ্ছে। দেশটা এমন অবস্থায় গিয়েছে যে দেখার কেউ নেই। আজ ১০ টাকা কমলে কাল ১০০ টাকা বেড়ে যায়। কি এক আজব নিয়ম! এখানে নিয়ন্ত্রণহীন পাগলা ঘোড়ার মতো চলে সব। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে মুরগি বিক্রেতা জয় বলেন, আমরা যেমন দামে কিনি তার চেয়ে কিছু বেশি দামে বিক্রি করি। ২৬০ টাকায় পাইকারি মুরগি কিনলে ৩০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। মুরগি আনতে একটা খরচ, দোকান খরচ, স্টাফ খরচ, নিজের মজুরি, এরপর লাভের চিন্তা করতে হয়। তবে পাইকারি বাজারে আরেকটু কম দামে মুরগি পেলে আমরাও কমাতে পারতাম। দাম কমানোর চাবিতো পাইকারদের হাতে। আমরা তো খুচরা ব্যবসায়ী। মাংস বিক্রেতা আব্দুল জলিল বলেন, আমরা ৬০০ টাকার মাংস এ সপ্তাহে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করছি। আগামী সপ্তাহে ৭০০ বা ৭৫০ বিক্রি করতে হবে। কিছুই করার নেই। একটি গরু কিনে কাটলে তার খরচ কেজিপ্রতি ৭০০ করেই দাঁড়ায়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় অধিকাংশ সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকার মতো। গত সপ্তাহে শীতের সবজি শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, মুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও এখন সে তুলনায় ১০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এছাড়া বাজারে সারা বছরের সবজি গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। গত সপ্তাহে এ বেগুনের দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বেশি চড়েছে লাউয়ের দাম। প্রতিটি কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে কেনা গেছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এছাড়া গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকার মতো বেড়ে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। পেঁয়াজের দামে এখনো কোনো সুখবর নেই। বরং দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লেও গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে, বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১০ থেকে ১২০ টাকা। ক্রেতাদের ভারতীয় পেঁয়াজ কিনতে খরচ করতে হচ্ছে কেজিতে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আর দেশি পুরাতন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার উপরে।
অন্যদিকে কিছুদিন আগেও ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। যা এখন ২০০ টাকায় ঠেকেছে। একইভাবে বেড়েছে সোনালি জাতের মুরগির দাম। আগে এ জাতের মুরগির কেজি পাওয়া যেত ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায়। দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে। অন্যদিকে গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ছিল ১৩০ টাকার ডজন। যা এখন ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকাল বৃহস্পতিবারের বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। মাঝারি চালের কেজি পড়ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। আর সরু চালের কেজি পড়ছে ৬২ থেকে ৭৫ টাকা। টিসিবির হিসাবের বাইরে বাজারে প্রতি কেজি সরু চালের দাম ৯৫ টাকা পর্যন্ত দেখা গেছে। চালের মতো ডালের বাজারও এখনো চড়া। টিসিবির হিসাবে বাজারে মোটা, মাঝারি ও সরু মসুর ডালের কেজি ১০৫ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা। গত এক সপ্তাহে ডালের দামে কোনো ওঠানামা নেই। এমনকি টিসিবির হিসাবে গত এক মাসের মধ্যে ডালের দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। চিনির বাজার এখনো অস্থির। খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। তবে বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ একেবারে নেই বললেই চলে। সরকার খুচরা বাজারে খোলা চিনি ১৩০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকায় বেঁধে দিয়েছে। এই দর কার্যকর হতে দেখা যায়নি। মাঝারি মানের চাষের পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। বড় আকারের চাষের তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা। আর মান ও আকারভেদে চাষের রুই মাছের কেজি পড়ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।