ত্রি-ধারায় বিভক্ত নেতাকর্মী কে হাসবেন শেষ হাসি

28

 

সুনামগঞ্জ-১

বাবরুল হাসান বাবলু, তাহিরপুর থেকে

তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগরসহ চার উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন সুনামগঞ্জ-১। এ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮ জন প্রার্থী বিভিন্ন প্রতীকে ৭ জানুয়ারী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দীদের অনেকে। এর মধ্যে নির্বাচন কে কেন্দ্র করে মাঠে সরব রয়েছেন নৌকা মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকার, নৌকা বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য সেলিম আহমদ সহ তিন জন। আর এ তিন প্রার্থীকে কেন্দ্র করে অনেক আগে থেকেই সুনামগঞ্জ -১ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী দলীয় অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ত্রি-ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। যার কারনে এ আসনে এখন পর্যন্ত ত্রিমুখী লড়াইড়ের সম্ভাবনা দেখছেন সাধারন ভোটাররা। তাই সহসাই বলা যাচ্ছেনা কে হচ্ছেন এ আসনের এমপি। প্রতীক বরাদ্ধের পর প্রচার প্রচারনা ও সভা সমাশে করছনে তিন প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা। ভোটের মাঠে একে অপরকে ঘায়েল করতে করছেন নানা আলোচনা সমালোচনা।
এডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করলেও এবারই তিনি প্রথম নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। প্রতীক পাওয়ার পূর্বে নেতাকর্মীরা একটু দুরে থাকলেও বর্তমানে অনেক নেতাই রনজিত সরকারের সমর্থনে প্রচার প্রচারনায় মাঠে নেমেছেন। বর্তমানে যারা মাঠে কাজ করচেন নৌকা প্রতীকের হয়ে তাদের মধ্যে রয়েছেন তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবুল হোসেন খান, সহ সভাপতি আলী মর্তুজা, সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর, সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর খোকন, একলাছুুর রহমান তারা, আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান, আতাউর রহমান, বোরহান উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, আফতাব উদ্দিন, ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি এড. আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বিলকিস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ মুরাদ, আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান জুবায়ের আহমেদ হিমু, সেলিম আহমেদ, মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ সরকার, ইউপি চেয়ারম্যান আলমীগর খসরু, সঞ্জিব তালুকদার টিটু,
জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আজাদ, আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি মুকিত চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন সহ অনেকে।
অপরদিকে দীর্ঘ ১৫ বছর এ আসনে সংসদ সদস্য থাকার পরও দলীয় মনোনয়ন নৌকা বঞ্চিত হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তিনি এবার স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন কেটলি প্রতীকে। দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক নেতাকর্মীরাও তার সাথে রয়েছেন অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে। এ আসেন যারা তার পক্ষে মাঠে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম, জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য শাহারিয়ার চৌধুরী বিপ্লব, বালিজুরী ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য আজাদ হোসেন, তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোদাচ্ছির আলম সুবল, যুবলীগ সভাপতি হাফিজ উদ্দিন, ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি আবুল বাশার, জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক এম নবী হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম আফিন্দি রাজু, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিজবাহ উদ্দিন, যুবলীগ সভাপতি আবুল খায়ের, মধ্য নগর স্বেচ্ছা সেবকলীগ সভাপতি সাইদুর রহমান, বাজার বণিক সমিতির সভাপতি অমরেশ চৌধুরী।
অন্যদিকে গত ৫ বছর ধরে যিনি মাঠের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে রেখেছেন তার মধ্যে অন্যতম সেলিম আহমদ। তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও সাবেক সভাপতি জেলা শ্রমিকলীগ। তিনিও এ আসন থেকে মনোয়ন চেয়েছিলেন নৌকা প্রতীক কিন্তু না পেয়ে তিনিও ঈগল পাখি প্রতীকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। দীর্ঘ সময় মাঠে থাকার কারনে এ আসনের ছাত্রলীগ সংগঠন সহ অনেক নেতাকর্মীরা তার সাথে ঈগল প্রতীকে সাধারণ ভোটারদের কাছে ভোট প্রত্যাশা করছেন সেলিম আহমদের জন্য। সেলিম আহমদের সাথে যে সকল নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে মাঠে রয়েছেন তারা হলেন তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সদস্য ও ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সুষেন বর্মন, মৎস্যজীবী লীগ সভাপতি আলম জিলানী সোহেল, ছাত্রলীগ সভাপতি আশ্রাউজ্জামন ইমন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, ধর্মপাশা, উপজেলা আওয়ামীলীগ প্রচার সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ, মধ্য নগর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা কবির খান, ধর্মপাশা উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা জনি, বাধন মিয়া সহ অনেকে। নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে ত্রি-ধারায় বিভক্ত থাকার কারেণ এখন বলা যাচ্ছেনা বা কেউ বলতে পারছেন না এ আসনে শেষ হাসিটা কে হাসছেন। স্বতন্ত্র না নৌকা। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও মধ্যনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্জিব তালুকদার টিটু বলেন, ছোট বেলা থেকে ছাত্রলীগ সংগঠন করে আসছি তাই দলীয় সংগঠনের বাইরে কোন চিন্তা করছি না। তাই আমি নৌকার প্রার্থী এডভোকেট রনজিত সরকারের সাথেই আছি।
তাহিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলগ সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, সেলিম আহমদ একজন পরিচ্ছন্ন রাজণীতিবিদ, সুনামগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকার তৃণমুল নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা তাকে খুব ভালোবাসে। আশা করি ভোটের দিনও সাধারণ লোকজন তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করবে ঈগল পাখি প্রতীকে ভোট দিয়ে।
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর বলেন, এক শ্রেণীর নেতারা আছেন বছরের পর বছর আওয়ামীলীগ করেন কিন্তু নির্বাচনের সময় আওয়ামীলীগ করতে পারেন না। দলীয় প্রতীক নৌকা হলেও তারা নৌকা প্রতীকের বাইরেই নির্বাচন করেন।
জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য ও তাহিরপুর বালিজুরি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন বলেন, দলের সভানেত্রী বলেছেন নির্বাচন উন্মুক্ত, নির্বাচন প্রতিযোগীতামুলক করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে যেতে বাধা নেই। তাই আমি কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে মাঠে কাজ করছি।
জেলা আওয়ামীলীগ সহ সভাপতি রেজাউল করিম শামীম বলেন, প্রতিযোগীতার মধ্যে দিয়ে নির্বাচন করে আসার জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে। যে কারনে দলের মধ্যে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। আমাদের প্রার্থী সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নৌকা প্রতীক না পেলেও আমরা আশা করছি কেটলি প্রতীকেই বিজয়ী হবো।
উল্লেখ্য আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে-৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন এর মধ্যে বিকল্পধারা ডাক্তার রফিক চৌধুরী তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। তাছাড়া জাতীয় পার্টি আব্দুল মান্নান, গণফ্রন্ট মো.জাহানুর রশিদ, সুপ্রিম পার্টি হারিছ মিয়া, বাংলাদেশ কংগ্রেস নবাব সালেহ আহমদ, তৃনমূল বিএনপি আশরাফ আহমেদ নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।