স্টাফ রিপোর্টার
আজ বুধবার সিলেট সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে ঘিরে ইতোমধ্যে সিলেটে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে সিলেট নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও রাস্তাঘাটসহ পুরো সিলেট নগরী নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে।
বিশেষ করে নগরীর বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, রিকাবিবাজার, লামাবাজার, সুরমা পয়েন্ট, তালতলা, দরগাহ গেট, আম্বরখানা, বিমানবন্দর সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে শোভা বর্ধনকারী ফুল গাছ লাগানো হচ্ছে। প্রস্তুত করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল সিলেট নগরীর ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসাহ মাঠ। মঞ্চ নির্মাণ কাজ ও সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ করে জনসভাস্হলকে প্রস্তুত করা হয়েছে। জনসভায় ঐতিহাসিক কলরেডি মাইক লাগানো হয়েছে। মঞ্চের সামনে বাঁশ দিয়ে চারদিকে শক্ত বেষ্টনী গড়ে তুলা হয়েছে। এসকল কাজ তদারকি করছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। একাজে সার্বিক সহযোগিতা করছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আজ ২০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে কয়েক লাখ লোকের জনসমাগম ঘটাতে তৎপরতা চালাচ্ছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিলেট সফরে প্রধানমন্ত্রী ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রঃ) ও হযরত শাহপরান (রঃ) এর মাজার জেয়ারত করবেন। বিকেলে সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসাহ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিবেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় দশ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন সিলেটের নেতাকর্মীরা। সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের নৌকার প্রার্থীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রত্যেক আসন থেকে ১০ হাজার করে মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে। জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপান্তরিত করার টার্গেট করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ।
গত এক সপ্তাহ থেকে চলছে নিয়মিত প্রচার প্রচারণা। আওয়ামীলীগ ছাড়াও অঙ্গ সংগঠনগুলো প্রচার মিছিল ও লিফলেট বিতরণ করছে নিয়মিত। বিভাগের প্রত্যেকটি জেলা ও উপজেলায় এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও শেখ হাসিনার আগমনকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেছে নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। সিলেট জুড়ে নেয়া হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইতিমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। গত তিন দিন থেকেই জনসভাস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে সিলেট থেকে নির্বাচনী জোয়ার তুলতে চায় আওয়ামী লীগ। সে লক্ষ্যেই সিলেটের জনসভাকে বিশাল জনসমুদ্রে রূপ দিতে চান নেতাকর্মীরা। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সিলেটে ভোটের মাঠ এখনো নিরুত্তাপ। বিএনপি অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগের জন্য ভোটের মাঠ অনেকটা ফাঁকা। সিলেটে জাতীয় পার্টি ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্য বাকি দলগুলোর সাংগঠনিক তেমন অবস্থানই নেই। সেকারণে পূণ্যভ‚মি সিলেট থেকেই সারাদেশে নির্বাচনী ঝড় তুলতে চায় আওয়ামী লীগ।
এজন্য প্রতিবারের ন্যায় এবারও সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা করে কেন্দ্রীয় নেতারা দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। বৃহৎ সমাবেশ করতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। সিলেটের জনসমাবেশ দেখে যাতে নির্বাচন নিয়ে সারাদেশের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ জেগে ওঠে সেটার সফল বাস্তবায়ন ঘটাতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, আলীয়া মাঠে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় স্মরণকালের বৃহৎ জনসমাবেশ করার সকল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বিভাগের প্রতিটি জেলা উপজেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা সমাবেশে এসে যোগ দেবেন। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। নির্বাচনী ট্রেন থেকে নেমে ভুল করেছে বুঝতে পেরে বিএনপি-জামায়াত ৭ জানুয়ারি ভোটার উপস্থিতি কমানোর ষড়যন্ত্র করছে। তারা আগুন সন্ত্রাস করে মানুষের মধ্যে ভীতিসঞ্চারের চেষ্টা করছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সমাবেশে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি দেখে তাদের মাথা আরেকবার খারাপ হবে। সিলেট থেকে সারাদেশে নির্বাচনী উৎসবের জোয়ার ছড়িয়ে দেয়া হবে।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট আগমনকে কেন্দ্র করে চাঙা হয়ে ওঠেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। চলছে দফায় দফায় সভা ও প্রচার মিছিল। আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটবর্জনকারী বিএনপি ও জামায়াত চাইবে ভোটার উপস্থিতি কমাতে। তাদের এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে শেখ হাসিনার প্রথম নির্বাচনী জনসভা জনসমূদ্রে পরিণত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যাতে সিলেটের জনসমূদ্র দেখে দেশের সকল জেলায় দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। তারা যাতে সপরিবারে উৎসবমূখর পরিবেশে ভোট দিতে চায়। ওই জনসভায় সিলেট বিভাগের নৌকা এবং কোন আসন জোটের শরীক কোন দলকে ছেড়ে দেয়া হলো ওই আসনের প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তাদের পক্ষে সিলেটবাসীর কাছে ভোটও চাইবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট সফর ও জনসভা প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ জানান, শেখ হাসিনা প্রতিবারই পূণ্যভ‚মি সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট আগমনের খবরে শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। সিলেটের এই জনসভার জনসমাবেশ দেখে সারাদেশে নির্বাচনী ঝড় আরও বেগবান হবে বলে আমরা আশাবাদী।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, জাতির পিতার কন্যা বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমাদের শ্রদ্ধা ও হৃদয়ের সকল ভালোবাসা দিয়ে তাক বরণ করে নিতে সিলেট প্রস্তুত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে সিলেট নগরীকে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে। আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরের মতো পবিত্র নগরী সিলেট থেকে তার আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবেন। সিলেটের উন্নয়নে তার অসামান্য অবদানের জন্য আমরা তার কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। সিলেটবাসী আসন্ন নির্বাচনে এর প্রতিদান দেবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন।