নারী ও কন্যাশিশু হত্যার ঘটনা রোধ হচ্ছে না। আর এই পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক সেটাও বলার অপেক্ষা রাখে না। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের পাশাপাশি শিশুদের জন্য পৃথক অধিদপ্তর গঠনের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের নেতারা। তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১০ মাসে (জানুয়ারি থেকে অক্টোবর) সারাদেশে ৬৯৫ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে নারী ৫০২ জন এবং কন্যাশিশু ১৯৩ জন। আর এ সময়ের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ৫৯০ জন, যাদের মধ্যে ৩৪৭ জন নারী এবং ২৪৩ জন কন্যাশিশু।
এছাড়া পারিবারিক সহিংসতার শিকার ১৭৯ জন নারী ও ২০ কন্যাশিশু। পাচার ও অপহরণের শিকার হয়েছেন ৩২ নারী ও ১৩৬ কন্যাশিশু। বিদ্যমান এ বাস্তবতায় নারী ও শিশুর সুরক্ষার জন্যই এটি জরুরি- এমন বিষয় উঠে এসেছে। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ-২০২৩ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সুরক্ষা আইন প্রণয়নের পাশাপাশি পৃথক অধিদপ্তর গঠনের দাবি জানায় জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।
আমরা মনে করি, যেসব তথ্য সামনে আসছে তা সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। জানা যায়, এডুকো বাংলাদেশের সহায়তায় ৭০টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং ২৮টি ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০২২ জন। এদের মধ্যে ৩৬২ জন নারী ও ৬৬০ জন কন্যাশিশু। একইসঙ্গে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল আরও ৫৩ জন নারী ও ১৩৬ কন্যাশিশুকে। ধর্ষণপরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ১৩ জন নারী ও ৩৪ জন কন্যাশিশু। এছাড়া যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন মোট ৩৫২ জন। যার মধ্যে ৯৬ জন নারী ও ২৫৬ জন কন্যাশিশু।
আমরা বলতে চাই, যেভাবে প্রতিনিয়ত নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যার চিত্র সামনে আসে, নারী নির্যাতনের বিষয় জানা যায়, তা কতটা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগে এমন বিষয়ও উঠে এসেছে যে, শিক্ষায় অগ্রগতি সত্তে¡ও বিশ্ব এখনো মেয়েদের জন্য সহিংস ও অত্যন্ত বৈষম্যমূলক। আর জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ নানা দিক দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও নারী নির্যাতন রোধ হচ্ছে না। এছাড়া নারী নির্যাতনের কারণে প্রতি বছরই আশঙ্কাজনক হারে ঘটে চলেছে ধর্ষণ ও আত্মহত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও। ঘরেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেক নারী- এমন খবরও বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে পত্রপত্রিকায়। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। সার্বিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের পাশাপাশি শিশুদের জন্য পৃথক অধিদপ্তর গঠনের যে দাবি জানিয়েছেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের নেতারা- সেটিও বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।
লক্ষণীয়, এটা আলোচনায় এসেছে যে, স্বাধীনতার ৫২ বছরে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নে কাক্সিক্ষত অর্জন নিশ্চিত হয়নি। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে, আমাদের নারী ও কন্যাশিশুদের এখনো বঞ্চনা-বৈষম্য এবং নিপীড়ন থেকে মুক্তি ঘটেনি। বরং তাদের প্রতি সহিংসতা যেন ক্রমাগত বাড়ছে- এমন বিষয়ও আলোচনায় উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
সর্বোপরি বলতে চাই, নারী ও কন্যাশিশু হত্যা, নির্যাতনসহ যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে তার প্রভাব অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এমন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে স্পষ্ট হতে পারে, সমাজ ক্রমেই মনুষ্যত্বহীন হয়ে উঠছে। ফলে সমাজ বিনির্মাণের কথাও ভাবা দরকার। এছাড়া পরিবার থেকে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়াও জরুরি। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমনটি কাম্য।