কাজির বাজার ডেস্ক
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চল। এই অঞ্চলের মানুষের প্রবাসে যাওয়ার প্রচলন অনেক আগে থেকেই। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো থাকে তাদের সেই স্বপ্নের তালিকায়। আর তাদের স্বপ্নকে পুঁজি করে কিছু কিছু প্রতারক ফাঁদ পেতে থাকে বিভিন্নভাবে। তেমনি এক প্রতারকের প্রতারণার শিকার হয়েছেন গোলাপগঞ্জের ১৬ যুবক। প্রতারণার শিকার হয়ে এখন তারা পথের ভিখারি বলা যায়। তাই কোনো উপায় না পেয়ে এবার ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার হুমকি দিলেন প্রতারিতরা।
জানা যায়, সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১৬ যুবককে রোমানিয়া পাঠাবেন বলে তাদের পাসপোর্ট ও সব মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন গোলাপগঞ্জের আছিরগঞ্জ বাজারের আমকোনা গ্রামের মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে জহির উদ্দিন। তিনি ওই বাজারের আজিজ ট্রাভেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। টাকা ও পাসপোর্ট নিয়ে ৯ মাস ধরে লাপাত্তা রয়েছেন তিনি। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহননের হুমকি দেন ওই ১৬ যুবক।
প্রতারিতরা হলেন-১০ নং উত্তর বাদেপাশা ইউনিয়নের খাগাইলের আব্দুস সোবহান, আলী হোসেন, আমকোনার সাইদ আহমদ, ফখর মিয়া, আব্দুল ওদুদ, মোল্লারচকের আলফাছ উদ্দিন, টিপু সুলতান, আব্দুল্লাহ আল নাহিদ, বাগলা গ্রামের নাসির উদ্দীন, হীরা মিয়া, তিলপাড়া ইউনিয়নের দেবারাই গ্রামের দুলাল মিয়া, বুধবারী বাজারের চন্দর পুরের আলী, কালপাড়া গ্রামের কামরান হোসেন কবির, আহমদপুরের আলী হোসেনসহ আরও দু’জন।
প্রতারিত আব্দুস সোবহান, কামরান হোসেন ও আলফাস আহমদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, আমকোনা গ্রামের মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে আজিজ ট্রাভেলসের মালিক জহির উদ্দিনের কাছে রোমানিয়া পাঠানোর খরচ বাবদ ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা করে ১৬ জনের কাছ থেকে কোটি টাকার উপরে দেয়া হয়। তারপর একসময় জহির উদ্দিন টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। ৪/৫ মাস ধরে তারা জহিরের পরিবারের সদস্যদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু তারা প্রথমে আশ্বাস দিলেও পরে এ ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করতে অস্বীকার কারেন। তারা জানান, টাকা চাওয়ার অপরাধে সম্প্রতি জহিরের চাচা নূর উদ্দিন প্রতারিত যুবক ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করে হয়রানি করছেন।
তারা বলেন, ধারদেনা করে বাড়ি ঘর ও জায়গা জমি বিক্রি করে জহিরের কাছে টাকা দিয়েছিলাম। এখন কোনো উপায় পাচ্ছেন না। তাই জেলা প্রশাসনসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানাই, অবিলম্বে জহিরের কাছ থেকে আমাদের টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করার জন্য। টাকা উদ্ধার ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করলে আত্মহত্যা ছাড়া আমাদের আর কোনো কিছু করার নেই। আগামী ২৬ নভেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে আমরা ফেসবুক লাইভে এসে সবার সামনেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেব।
প্রতারিত টিপু সুলতান বলেন, বাড়িভিটা বেচে ও ধারদেনা করে ৭ লাখ টাকা দেই আজিজ ট্রাভেলসের মালিক জহির উদ্দিনের কাছে। এলাকার হওয়ায় তাকে বিশ্বাস করতে দ্বিধা করিনি। যার কারণে আমি, আমার চাচাতো ভাই আলফাছ উদ্দিন ও ভাতিজা আব্দুল্লাহ আল নাহিদ একসাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ধাপে টাকা দেই। প্রথমে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার সময় আমরা তিনজন মিলে দেড় লাখ টাকা দেই। পরে সরাসরি তার হাতে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করে তিনজনে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেই। সবশেষ পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে জনপ্রতি ৩ লাখ করে ৯ লাখ টাকা দেই গত জানুয়ারির ২৬ তারিখ।
গত ফেব্রæয়ারির ১২ ও ১৩ তারিখের ফ্লাইট মিস হওয়ার কারণে ২৩ ফেব্রæয়ারি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০ ফেব্রæয়ারি থেকে আর কোনো খোঁজখবর নেই জহির উদ্দিনের। প্রতারিত হয়েছেন ১৬ জন যুবক।
আব্দুস সোবহানের বড়ভাই আব্দুস সালাম জানান, তার ভাইয়ের মতো এলাকার ১৬ জনের কাছ থেকে জহির উদ্দিন ও তার সহযোগীরা টাকা নিয়েছেন। রোমানিয়ায় পাঠানোর জন্য একেক জনের কাছে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয় জহির। গত ২৭ ফেব্রæয়ারি তাদের ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। ফ্লাইটের দিন সবাই বকেয়া টাকা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু ২২ ফেব্রæয়ারি থেকে লাপাত্তা রয়েছেন জহির। তখন তারা বুঝতে পারেন তারা প্রতারিত হয়েছেন।
তিনিও আরও জানান, তিনি ঋণ করে জহিরের হাতে টাকা তুলে দিয়েছেন। অনেকে সুদে টাকা এনে, বসতভিটা বন্ধক রেখে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে টাকা দিয়েছিলেন। এখন বিদেশ যেতে না পারায় তারা মহাবিপদে পড়েছেন। পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এখন পাওনাদারদের ভয়ে অনেকেই ঘরছাড়া।