যুদ্ধ-সংঘাতকে বন্ধে বিশ্ব নেতাদের উদ্যোগ নিতে হবে

51

 

যুদ্ধ বিগ্রহ কখনওই মানবজাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানবজাতি ও বিশ্ব মানবতাকে বাঁচাতে হলে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সব ধরনের যুদ্ধ ও সংঘাতকে কঠোরভাবে ‘না’ বলতে হবে। বিশ্বায়নের বিশ্বে এটা নিশ্চিতভাবেই সহজ। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী বুধবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘জি-২০ লিডার্স সামিট-২০২৩’-এ দেওয়া বক্তব্যে এই আহŸান জানান। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি তিনি এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
আমরা বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী ‘জি-২০ লিডার্স সামিট-২০২৩’-এ দেওয়া বক্তব্যে যুদ্ধ সংঘাত বন্ধের যে আহŸান জানিয়েছেন তার গুরুত্ব অনুধাবন করা এবং প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব নেতৃত্বের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। উলেস্নখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ আমাদের সবাইকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর আবাস হিসেবে পৃথিবীকে গড়ে তোলার প্রেরণা জোগাবে।’ এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর আবাস হিসেবে পৃথিবীকে গড়তে যুদ্ধ ও সংঘাতমুক্ত রাখতে হবে। বলা দরকার. ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইউরোপে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় নামিয়েছে এবং এই দুর্দশা চলছেই। দেড় মাস ধরে আমরা ফিলিস্তিনে নির্দয় গণহত্যা দেখছি, যেখানে এরই মধ্যে হাজার হাজার নারী-পুরুষ নিহত হয়েছেন এবং দুঃখজনকভাবে পাঁচ হাজারেরও বেশি নিষ্পাপ শিশু প্রাণ হারিয়েছে।’ একইসঙ্গে তিনি উলেস্নখ করেছেন যে, ‘এ ধরনের ন্যক্কারজনক কর্মকান্ড গোটা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে- যা বিশ্বকে আরও বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। ফিলিস্তিনে যে নির্দয় গণহত্যা চলছে তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। যেখানে নিষ্পাপ শিশু পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এর আগে যখন করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছিল বিশ্ব, তখন ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পৃথিবীকে নতুন সংকটের মুখোমুখি ফেলে দেয়। পণ্যদ্রব্যসহ সব ধরনের ব্যয় বাড়ে। যেখানে সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে জীবন চালাতে হিমশিম খেতে হয়। অর্থাৎ এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, যুদ্ধ সংঘাত কতটা ভয়াবহ প্রভাব ফেলে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহŸান জানিয়ে বলেছেন, ‘আজকের সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহŸান জানাই, আপনারা এক হয়ে এই মুহ‚র্তে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি তুলুন। একই সঙ্গে নির্মমতার শিকার ভুক্তভোগীদের কাছে যেন অবিলম্বে নির্বিঘেœ মানবিক সহায়তা সরবরাহ হয়, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।’ আমরা মনে করি, বিশ্ব নেতাদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই আহŸানে সাড়া দেওয়া এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রæত সম্ভব পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
প্রসঙ্গত, এই সম্মেলনে সৎ প্রতিবেশী-সুলভ সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ও বিশ্বব্যাপী এর প্রসার একটি ভালো সূচনা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী ভারতের চমৎকার সম্পর্কের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন- যা ‘প্রতিবেশী ক‚টনীতির রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে উলেস্নখ করে তিনি বলেছেন, ‘প্রতিবেশীরা অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমরা আমাদের সমুদ্রসীমা ও স্থলসীমানা মীমাংসার মাধ্যমে তা প্রমাণ করেছি।’
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যুদ্ধের সার্বিক ভয়াবহতা বিবেচনায় নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। যুদ্ধ সংঘাত বন্ধ হলেই কেবল পৃথিবী সত্যিকারের বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মানবজাতি ও বিশ্ব মানবতাকে বাঁচাতে হলে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সব ধরনের যুদ্ধ ও সংঘাতকে কঠোরভাবে ‘না’ বলার যে আহŸান জানিয়েছেন, তা আমলে নিয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক এমনটি প্রত্যাশা।