কাজির বাজার ডেস্ক
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দু’টি ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক। সোমবার বিকেলে উপজেলার জগন্নাথপুর রেল ক্রসিং এলাকায় আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেন ও একটি মালবাহী ট্রেনের মধ্যে ভয়াবহ এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় এগারসিন্দুর এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি যাত্রীসহ উল্টে যায়। এগারসিন্দুর ট্রেনটি যাত্রীতে ঠাসা ছিল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া র্যাব-৯ এর এএসপি গোলাম মুহাম্মদ জানান, এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট। এ ছাড়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্য, রেলওয়ে ও জেলা পুলিশের সদস্যরাও উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেনের নিচে এখনো মানুষ চাপা পড়ে আছে। ক্ষতিগ্রস্ত কোচগুলোতে অনেকেই আহত অবস্থায় পড়ে আছে। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছে।
জানা যায়, একটি মালবাহী ট্রেন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল, আর আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেন যাচ্ছিল ভৈরব থেকে ঢাকায়। পরে ভৈরব রেল স্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ দুই বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এ সময় যাত্রীবাহী ট্রেনের কয়েকটি বগি উল্টে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। পরে ফায়ার সার্ভিস ও র্যাব সদস্যরা উদ্ধার কাজে যোগ দেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সিরাজ-উদ-দৌলা খান জানান, ভৈরব রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস গোধূলি ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার পর পরই স্টেশনের আউটারে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল না মানায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল না মানায় এ সংঘর্ষ হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি।
সিলেটের সাথে ট্রেন চলাচল বন্ধ:
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-কিশোরগঞ্জÑএই তিন পথে পাঁচ ঘণ্টা ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। পথে পথে আটকে আছে বেশ কিছু যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন।
দুর্ঘটনার পর মালবাহী ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও পরিচালক (গার্ড)Ñএই তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোঃ সফিকুল ইসলাম। সফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ইতিমধ্যে উদ্ধারকারী ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। উদ্ধার তৎপরতা চলছে। দুর্ঘটনা তদন্তে ইতিমধ্যে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলওয়ের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। চার সদস্যবিশিষ্ট অপর তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে আছেন ঢাকা বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা।
এদিকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, এ পর্যন্ত আহত ৭০ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। ২১ জনকে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার্থে পাশের কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আরও চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় ওষুধ আনা হয়েছে।
স্বজনদের আহাজারি:
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহতসহ আরও বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। হতাহতদের উদ্ধারে কাজ শুরু করেছেন র্যাব-পুলিশ ও ফায়ার সাভিসের কর্মীরা। দুর্ঘটনাস্থলে হতাহতদের স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা গেছে।
দুর্ঘটনায় ২ তদন্ত কমিটি গঠন
ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় বিভাগীয়ভাবে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার সিরাজ-উদ-দৌলা খান। তিনি জানান, ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনায় রেলওয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ আলাদাভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ঢাকা বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেনÑ ঢাকা বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার লোকোমেটিভ, বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ এবং বিভাগীয় সিগনাল ও টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশলী।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় তদন্ত কমিটিতে আছেনÑ রেলওয়ের সিওপিস মো. শহিদুল ইসলাম, চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার, আরমান হোসেন, সিএসপি তুষার ও চিফ মেডিকেল অফিসার আহাদ আলী সরকার।
ট্রেনের চালক-গার্ড বরখাস্ত:
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের লোকমাস্টার (চালক), সহকারী লোকোমাস্টার ও গার্ডকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ কামরুল আহসান। তিনি আরও জানান, ঢাকা বিভাগীয় তদন্ত কমিটিকে তিন কর্মদিবস এবং চট্টগ্রাম জোনের তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বগির নিচে চাপা পড়ে আছে অনেকে:
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে যাত্রীবাহী ট্রেনে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় সংঘটিত দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। সোমবার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় অন্তত ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের তিনটি বগির নিচ থেকে একে একে লাশ বের করা হচ্ছে। এখনো অনেকে বগির নিচে চাপা পড়ে আছেন। ভৈরব বাজার ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মোশাররফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, দুর্ঘটনাকবলিত এগারসিন্দুর গোধূলির তিনটি বগি থেকে একে একে লাশ বের করা হচ্ছে। বগির নিচে অনেকে চাপা পড়েছেন। তাদের উদ্ধারে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাতেও উদ্ধার কাজ চলবে। ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট হতাহতদের উদ্ধারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।