নদী রক্ষায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে

15

 

দেশের নদনদীগুলোর অবস্থা রীতিমতো বিপন্ন। এমনকি কোনোটি মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। নদীর সর্বাঙ্গীণ অবস্থা, নাব্য, জীববৈচিত্র্য, জলজউদ্ভিদ, মৎস্যসম্পদ, নদীভাঙন, নদীদখল, নদীদূষণ ইত্যাদির ভয়াবহ চিত্র প্রতিদিনই গণমাধ্যমে খবর আসছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি দেখার মতো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে? নদনদী সুরক্ষায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ এমনকি প্রধানমন্ত্রী বারবার নির্দেশনায়ও ইতিবাচক ফল দেখছি না। গত সোমবার দেশের নদীগুলোর পানির প্রবাহ নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, হার্টে বøক তৈরি হলে মানুষ মারা যায়। আমাদের নদী ও খালগুলো মানুষের প্রাণের মতো। এগুলোকে প্রবাহিত রাখতে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নদীর প্রবাহ যেন অব্যাহত থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের প্রতিটি প্রকল্প গ্রহণ ও সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বা উন্নয়নের নাম করে কিন্তু সমস্ত খাল, বিল, নদী-নালা, পুকুর পর্যন্ত ভরাট করে ফেলা হয়।
আমি মনে করি, এটা অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ। প্রধানমন্ত্রীর এ অনুভব কি কর্তৃপক্ষ আমলে নেবে, গুরুত্ব দেবে; সেটাই দেখার বিষয়। ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ নদনদী এখন দখল-দূষণ-বর্জ্যে মৃতপ্রায়। বিশেষ করে ঢাকাকে ঘিরে শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বুড়িগঙ্গার সর্বত্রই চলছে দখলবাজদের আগ্রাসী থাবা। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশেই চলছে আগ্রাসী থাবায় নদনদী দখলবাজির দুর্বৃত্তপনা। যে কোনো নদীর পাড়ে চোখ মেলে তাকালেই দখলবাজির পরিমাণটাও স্পষ্ট হয়ে যায়। অবস্থা এমনই, অনেক নদনদীর অস্তিত্ব মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যাবে না। দখল ও দূষণের কারণে গত ৪ দশকে দেশের ৪০৫টি নদনদীর মধ্যে প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে ১৭৫টি। বাকি ২৩০টিও রয়েছে ঝুঁকির মুখে। ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ কমে গিয়ে হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে যা ৪ হাজার কিলোমিটারে এসে দাঁড়ায়। এই চিত্র ব-দ্বীপটির কৃষি, যোগাযোগ, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মানুষের জীবনযাত্রা সবকিছুর জন্যই ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ। নদনদী, জলাশয় রক্ষার তাগিদ প্রতিনিয়ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায় থেকে জানানো হচ্ছে। পরিবেশ সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের পদাধিকারীরা বলছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত উপেক্ষিত হচ্ছে। সংকট কোথায়? দখল-দূষণকারীরা কি এতই শক্তিশালী, রাষ্ট্রীয় সব উদ্যোগ তাদের কাছে অসহায়। নাকি সরকারের এ সংক্রান্ত কর্মকাÐের মধ্যে শিথিলতা রয়েছে। অভাব রয়েছে সংশ্লিষ্টদের দৃঢ়তায় ও সদিচ্ছায়। আমরা দেখছি, বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে নদনদী মুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে, কিন্তু বেশি দূর যাওয়ার আগেই তা আবার থেমেও যায়। নদনদী রক্ষা করতে হবে জাতীয় স্বার্থকে সব ধরনের ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থের ঊর্ধ্বে রেখে। নদী রক্ষায় শুধু প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। যে মানুষদের উদ্দেশ্য করে প্রকল্প নেয়া হয়, তাদের স্বার্থ আসলেই সংরক্ষণ হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করতে হবে। নদী রক্ষায় নীতি ও আইন রয়েছে। এসব নীতি ও আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।