স্টাফ রিপোর্টার
সিলেট সদর উপজেলার খাদিম চা বাগান এলাকায় টিলা ধসে অর্চনা ছত্রী (১১) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে খাদিম চা বাগান বস্তি লাইন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। অর্চনা ওই এলাকার বুলবুল ছত্রীর মেয়ে।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আতাউর রহমান শামীম। তিনি জানান, অর্চনাদের ঘরটি ছিলো একটি টিলার পাদদেশে। শুক্রবার ভারী বৃষ্টিতে সে টিলা ধসে রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাদের ঘরের উপর পড়লে অর্চনা নামের এ শিশু ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে সকালে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শনিবার বাদ জোহর লাশ দাফন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন সিপন বলেন, এক শিশু মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এলাকাটি আমাদের কালাগুলা পুলিশ ফাঁড়ির অওতাভুক্ত। স্থানটি একটি দুর্গম, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না। তাই পুলিশ টিম ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি।
এদিকে, গত ৩ দিন সিলেটে হয়েছে ভারী বর্ষণ। শনিবার টানা এ বৃষ্টির ফলে নগরীর আখালিয়া এলাকায় একাধিক টিলা ধসের ঘটনা ঘটেছে। আখালিয়া এলাকায় দুটি গ্রামে টিলা ধসে বাড়ি-ঘরের দেয়াল ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। শনিবার ভোরে টিলা ধসের এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা জানান- দেয়াল ধসে কারো শোবার ঘর ও কারো রান্নাঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।
তারা বলেন- দেয়াল ধসে কাদামাটি বসতঘরে ঢুকে পড়েছে। পরিবারের সদস্যরা এ কাদামাটি সরাচ্ছি। টিলা ধসে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে এগুলো আমরা কীভাবে পুষিয়ে উঠবো তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। এদিকে, টিলা ধসের খবর পেয়ে টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার নাছির উদ্দিন এবং ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার সৈয়দ কাওসার আহমদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন।
জৈন্তাপুর:
জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের পূর্বসাতজনি গ্রামে অবিরাম বৃষ্টিপাত হওয়ায় টিলা ধসে ৩টি পরিবারের বসতঘর মাটি চাপাপড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। তবে এই ঘটনায় পরিবারের কেউ হতাহত হয়নি।
জানা গেছে, কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে ৭ অক্টোবর শনিবার ভোররাতে জৈন্তাপুর উপজেলা চিকনাগুল ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের পূর্বসাতজনি গ্রামে টিলা ধসের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় লেদই পাত্র (৬৫) সুদেন পাত্র (৪৬) ও রণ পাত্র (৫৫)’র পাশাপাশি থাকা ৩টি পরিবারের বসতঘর মাটি চাপা পড়ে।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানান, শনিবার ভোররাতে বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে হঠাৎ করেই ঘরের দেয়ালে মাটি ধসে পড়ে আমরা একে-অপরকে ডাকাডাকি করে ঘর থেকে বের হয়েছি। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আমাদের প্রাণে রক্ষা করেন। মূহুর্তের মধ্যেই ৩টি পরিবারের বসতঘরের উপর টিলা ধসে মাটি চাপা পড়ে। আমরা ঘরের মালামাল রক্ষা করতে পারি নাই। ঘটনার খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল-বশিরুল ইসলাম। তিনি তাৎক্ষনিক ভাবে নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। তিনি জানান, জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবগত করে ক্ষতিগ্রস্থ বসতঘর মেরামতসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতি বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য: গত বছরে ৬ জুন একই গ্রামে টিলা ধসে একটি পরিবারের ৪ জন নিহত হয়েছিলেন।
হবিগঞ্জ:
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি পরগণা দিনারপুরে টিলা ধ্সে ৩টি ঘর ভেঙে গেছে। এ ঘটনায় তিন পরিবারের ১০জন আহত হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের মীরটিলার পাদদেশে টানা বৃষ্টির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাস অনুপ। এদিকে টিলা ধসের খবরে দিনারপুর পরগণার তিনটি ইউনিয়নের পাহাড়-টিলার পাদদেশে বসবাসকারী বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- নবীগঞ্জ উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল খ্যাত দিনারপুর পরগণা দেবপাড়া, গজনাইপুর ও পানিউমদা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। মুষলধারায় বৃষ্টি হলেই পাহাড়-টিলার পাদদেশে বসবাসরত বাসিন্দাদের মধ্যে মনে ঝুঁকি ও আতঙ্ক দেখা দেয়। টানা বৃষ্টির ফলে শুক্রবার সন্ধ্যায় গজনাইপুর ইউনিয়নের বনগাঁও মীর টিলার মাটি ধ্বসে পড়ে। এতে মীরটিলার পাদদেশে বসবাসকারী হিরা মিয়া, ধনাই মিয়া ও রেজাক উল্লাহর ঘর ভেঙে আসবাবপত্র, গবাদি পশুর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসময় স্থানীয় লোকজন তিনটি পরিবারের নারী-শিশুসহ ১০ জন সদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। খবর পেয়ে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাস অনুপ। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ইউএনও।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাস অনুপ বলেন- টিলা ধসের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কি কি দেয়া যায় একটা তালিকা করে খুব দ্রæত সহায়তা প্রদান করা হবে।