কাজির বাজার ডেস্ক
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বিভিন্ন দেশের খুনিরা কানাডায় আশ্রয় নিয়ে আরাম-আয়েশের জীবন যাপন করতে পারে। ভারত-কানাডা দ্ব›েদ্বর মধ্যে এক সাক্ষাৎকারে তাঁর এ বিস্ফোরক মন্তব্য এল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্যটি করেন।
কানাডার মাটিতে খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাÐকে কেন্দ্র করে তলানিতে নেমেছে ভারত-কানাডা সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করেছেন, তাঁর হত্যাকাÐে ভারত সরকার জড়িত। এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে প্রতিবেশী দেশটি পাল্টা বলছে, হরদীপসহ সন্ত্রাসবাদে জড়িতদের আশ্রয় দিচ্ছে কানাডা।
এমন প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে চলছে বাদানুবাদ। এরই মধ্যে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে কথা বলেছেন ইন্ডিয়া টুডের ক‚টনৈতিক প্রতিবেদক গীতা মোহন। কানাডার ‘প্রত্যর্পণ’ নীতি নিয়ে মুখ খুলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর খোলামেলা ও সরাসরি বক্তব্যকে সুস্পষ্ট অবস্থান হিসেবে দেখছে ভারতীয় গণমাধ্যম। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, ‘কোনোভাবেই কানাডার উচিত হবে না খুনিদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা। খুনিরা কানাডায় গিয়ে আশ্রয় নিতে পারে এবং সেখানে তারা আরাম-আয়েশের জীবন যাপন করে। বিপরীতে খুনের শিকার ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনেরা কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করে।’ কানাডার মৃত্যুদÐবিরোধী অবস্থানের সমালোচনা করে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের বিচার বিভাগ খুবই স্বাধীন এবং সরকার এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’
এ ক্ষেত্রে মৃত্যুদÐ পরিবর্তিত হয়ে যাবজ্জীবন কারাদÐের সুযোগ আছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে ফিরে এসে নূর চৌধুরী ও রশিদ চৌধুরী উভয়ই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি চাইলে তাঁদের আবেদন মঞ্জুর করতে পারেন এবং মৃত্যুদÐকে যাবজ্জীবন কারাদÐে পরিবর্তন করতে পারেন।’
‘মানবাধিকারের অপব্যবহারের’ মতো বৈশ্বিক উদ্বেগ নিয়েও কথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অনেকেই বিভিন্ন সময় মানবাধিকারের অপব্যবহার করে ফায়দা লুটেছে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে হত্যাকারী, খুনি ও সন্ত্রাসীদের রক্ষা করার জন্য এটিকে অনেক সময়ই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।’
বিদ্যমান বন্দী প্রত্যর্পণ নীতি থেকে কানাডার সরে আসা নিয়ে বাংলাদেশ আশাবাদী কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশাবাদী মানুষ এবং সব সময়ই আশার পিঠে আশা রাখি। আমি বিশ্বাস করি, কানাডা সরকার একদিন এই নীতি (প্রত্যর্পণ) পরিবর্তন করবে। কারণ, কানাডা বিভিন্ন দেশের খুনিদের একটি আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে।’
সরকারের এই মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি দেখেছি যে কেউ যদি কোনো খুন করে, পরে তারা বিভিন্ন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে কানাডায় খুব সহজেই আশ্রয় পেয়ে যায়। এবং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কানাডা খুনিদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কানাডা খুবই সুন্দর দেশে। খুবই ভালো একটি দেশ, কিন্তু এই নির্দিষ্ট আইন কানাডার সুনাম ক্ষুণœ করছে।’