শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং নিয়মিত অঘটন হয়ে দাঁড়িয়ে। এতে কখনও কখনও শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনও হুমকির সম্মুখীন হয়। কিন্তু প্রায়ই এ ধরনের ঘটনায় আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এবারে কঠোর অবস্থানে গিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে র্যাগিং বা বুলিংয়ে জড়ালে ধরন অনুযায়ী প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারি আইনে শাস্তি হবে। এমনকি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, গভর্নিং বডির সভাপতি বা সদস্যরাও যদি র্যাগিংয়ে জড়ান তাদের বিরুদ্ধেও ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে এমন বিধান রেখে ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ নীতিমালা’ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে সব প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে এ নীতিমালা পাঠিয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বলেন, সম্প্রতি শিক্ষার্থীরা অতিমাত্রায় ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়েছে। যার কারণে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন মাত্রার র্যাগিং বা বুলিংয়ে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহপাঠী বা প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্টদের ব্যঙ্গাত্মক ছবি ছড়িয়ে দেয়। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সামাজিকভাবে হেয় হয়। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়। এ নীতিমালায় যৌক্তিকভাবে এসব কাজের সমাধান দেয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা সহজ হবে। গত ১২ ফেব্রæয়ারি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের অতিথি কক্ষে ৪ ঘণ্টা আটকে রেখে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এর আগে বাংলাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের ঘটনা আলোচনায় আসে। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনা এখনো অনেকের মনে আছে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে র্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে বুয়েটের বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার ও আবাসিক হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই শাস্তি দেয়া হয়। দÐপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা শাস্তির কপি হাতে পাওয়ার পর এর বিরুদ্ধে একাডেমিক কাউন্সিলে আপিল করেন। কিন্তু তা খারিজ হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালে ৩৫ শিক্ষার্থী হাইকোর্টে পৃথক রিট করেন। এরপর ওই বছরের ডিসেম্বরে বুয়েটে র্যাগিংয়ের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের শাস্তি আরোপে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্ট একাডেমিক কাউন্সিলের ওই রায় বহাল রাখেন। ওই রায়ে র্যাগিং প্রতিরোধে ছয় দফা নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। খারাপ কোনো কিছুর ইঙ্গিত করে কাউকে উদ্দেশ করে কিছু বলা বা লেখাকে মৌখিক বুলিং হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
উপহাস করা, খারাপ নামে সম্বোধন করা বা ডাকা, অশালীন শব্দ ব্যবহার করা, গালিগালাজ করা, শিস দেয়া, হুমকি দেয়া শারীরিক অসমর্থতাকে নিয়ে উপহাস করলেও মৌখিক বুলিংয়ের পর্যায়ে পড়বে। এ ব্যাপারে শিক্ষকদের সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নিলে এ সংকট নিরসন হতে পারে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণায়লয়ের এই নীতিমালা সঠিকভাবে কার্যকর হলে বুলিং ও র্যাগিং নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আমরা মনে করি।