মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর উপর ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে স্বপ্নের রাণীগঞ্জ সেতু নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী জুনে নব-নির্মিত সেতুটি চালু হতে পারে। এ নিয়ে স্থানীয় জনমনে কৌতুহলের শেষ নেই। সর্বত্র বিরাজ করছে আনন্দ-উল্লাস।
স্থানীয় একাধিক প্রবীণ মুরব্বিরা জানান, কুশিয়ারা নদীটি কারো জন্য আশির্বাদ। আবার কারো জন্য অভিশাপ। নদীটি পানি ও মাছের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে অনেককে করেছে স্বাবলম্বী। আবার নদী গর্ভে চলে গেছে অনেক বসত বাড়ি, স্কুল ও রাস্তাঘাট। কেউ হয়েছেন ধনী। আবার কেউ হারিয়েছেন সর্বস্ব। এ নদীটির কারণে যুগযুগ ধরে রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। এতে নদীর দুই পারের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। যদিও ফেরি ও খেয়া নৌকাযোগে চলাচল করছেন মানুষ। তাই জনভোগান্তি লাঘবে বিগত ১৯৯৬ সালে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত জাতীয় নেতা আলহাজ আবদুস সামাদ আজাদের প্রচেষ্টায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডাবর পয়েন্ট থেকে জগন্নাথপুর হয়ে আউশকান্দি পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ করলেও কুশিয়ারা নদীর উপর রাণীগঞ্জ সেতুটি করতে পারেননি। এর মধ্যে ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের কারণে থমকে যায় এসব উন্নয়ন কাজ। সুনামগঞ্জ থেকে জগন্নাথপুর হয়ে কম সময়ে সহজে ঢাকা চলাচলের স্বপ্ন দেখালেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি বরেন্য এ রাজনীতিবিদ।
অবশেষে প্রয়াত জাতীয় নেতা আবদুস সামাদ আজাদের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেন বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। মানুষের ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন আবার উজ্জীবিত করেন সজ্জন এ রাজনীতিবিদ। ২০০৮ সালে আবার আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের প্রাণপন প্রচেষ্টায় বিগত ২০১৬ সালের আগষ্টে ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেই স্বপ্নের রাণীগঞ্জ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এতে শুধু সেতু নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৯১ কোটি টাকা। সেতু নির্মাণ কাজ পায় দেশের নামকরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। বাকি ব্যয় ধরা হয়, এপ্রোচ সড়ক, টোলপ্লাজা, কালভার্ট ও স্থানীয় ইটাখলা নদীর উপর আরেকটি ছোট সেতু নির্মাণে। এরপর দ্রুত চলে সেতু নির্মাণ কাজ। দ্রুত ও মানসম্মত কাজ নিয়ে সর্বদা খোঁজ-খবর রাখেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তদারকি বাড়তে থাকে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। শুধু টাকার জন্য নয়, সুনামের জন্য কম সময়ের মধ্যে টেকসই উন্নতমানের কাজ উপহার দিতে দিনরাত কাজ চালিয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অবশেষে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় আশার আলো জেগেছে। চলতি ২০২২ সালে এসে প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে রাণীগঞ্জ সেতু নির্মাণ কাজ। এর মধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের প্রচেষ্টায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডাবর পয়েন্ট থেকে জগন্নাথপুর হয়ে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের পুন:নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে নির্মাণাধীন রাণীগঞ্জ সেতুর নিচে থাকা ফেরির মাধ্যমে সুনামগঞ্জ থেকে জগন্নাথপুর হয়ে ঢাকায় যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করছে। তবে সেতুটি চালু হলে ইকোনোমিক জোন হতে পারে রাণীগঞ্জ এলাকা। বাংলাদেশের সাথে সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুর, দিরাই সহ অত্র অঞ্চলের নতুন যোগাযোগের মাইলফলক উন্মোচিত হবে। রাজধানী ঢাকার সাথে বাড়বে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক। উন্নয়নের মাপকাঠিতে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে পিছিয়ে থাকা অত্র অঞ্চল। তাই জীবদ্দশায় আছলম আলী সহ অনেক প্রবীণ মুরব্বি রাণীগঞ্জ সেতু দিয়ে চলাচলের স্বপ্ন দেখছেন। তাদের সেই স্বপ্ন পুরণের সময় এসে গেছে। চলতি ২০২২ সালের আগামী জুনে সেতুটি চলাচলের উদ্বোধন হতে পারে। ২৭ এপ্রিল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, রাণীগঞ্জ সেতুর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ বলেন, ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭০২ মিটার দৈর্ঘ্যের রাণীগঞ্জ সেতুর নির্মাণ কাজ ৯৬ ভাগ শেষ হয়েছে। সেতুর মধ্যস্থানে আরো ৪ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। আশা করছি, আগামী জুনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, সেতুর ডিজাইনগত জটিলতা ও করোনার কারণে কাজ অনেকটা পিছিয়েছে। তা না হলে আরো আগেই শেষ হয়ে যেতো। এর মধ্যে রড, সিমেন্ট, পাথর সহ কচামালের দাম বৃদ্ধি পেলেও আমাদের কাজ থামেনি। আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কাজ চালিয়ে গেছি।
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু বলেন, বাংলাদেশের স্বপ্নের সেতু যমুনা। আর আমাদের স্বপ্নের সেতু রাণীগঞ্জ। এটি হচ্ছে সিলেট বিভাগের সব চেয়ে বড় সেতু। এ সেতুটি চালু হলে বৃহত্তর সুনামগঞ্জবাসী উপকৃত হবেন। এ সেতুটি নির্মাণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সেতুমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই। এখন আমাদের একটাই দাবি আগামী জুনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন আমাদের স্বপ্নের সেতুটি উদ্বোধন করেন। রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ছদরুল ইসলাম জানান, এটি আমাদের স্বপ্নের সেতু। সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় ঢাকার সাথে দুরত্ব অনেক কমে এসেছে এবং দেশের সাথে যোগাযোগের সেতুবন্ধন হয়েছে। তাই সেতুটি নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী সহ সকলকে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।