কাজির বাজার ডেস্ক
আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না’ বলে বিরোধীদের বক্তব্যের সমালোচনা করে দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ কোনোদিন পালায় না।’
মঙ্গলবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে কৃষক লীগ আয়োজিত ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ১৫ আগস্ট জাতির পিতার শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের বিরোধী দল, যদিও পার্লামেন্টে নেই, বলে আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। হুমকি দেয়। যিনি এ বক্তব্য দেন তাকে একটু স্মরণ করাতে চাইÑশেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কোনোদিন পালায় না, পালায়নি।’
ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সময় দেশে ফিরে আসার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘(বিএনপি প্রধান) খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া ২০০৭ সালে মুচলেকা দিয়ে দেশত্যাগ করেছিল যে আর কোনোদিন রাজনীতি করবে না। সেই সময় আমি বিদেশে ছিলাম, আমাকে আসতে দেবে না। আমাকে তখন তত্ত¡াবধায়ক সরকার আসতে দেবে না। সমস্ত আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সকে বলে দিয়েছে কেউ যেন আমাকে নিয়ে ঢাকায় ল্যান্ড (অবতরণ) না করে। ঢাকায় তাদের অবতরণ করতে দেবে না। এ ধরনের নির্দেশ দেওয়ার পরেও আমি এক রকম জোর করে বাংলাদেশে ফিরে আসি।’
‘আমাদের নেতা-কর্মীদের হুমকি দিয়েছিল যে কেউ যদি এয়ারপোর্টে যায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের নেতা-কর্মীরা তো মানেনি। যেদিন আামি জোর করে নামলাম ঢাকায় হাজার হাজার মানুষ সেদিন এয়ারপোর্টে।’
সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ফিরে এসেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে অনেক ভয় দেখানো হয়েছিল। যে মুহ‚র্তে নামবো সেই মুহ‚র্তে গুলি করে মারবে। আমি বলেছিÑখুব ভালো কথা দেশের মাটিতে তো মরলাম। বিদেশ বিভুঁইয়ে তো মরতে হলো না। আমাকে বলেছে এমন জায়গায় নেওয়া হবে কেউ খোঁজ পাবে না। আমি বলেছি বাংলাদেশে এখনো সে রকম জায়গা সৃষ্টি হয়নি যে আমাকে নিয়ে গেলে বাংলাদেশের মানুষ খুঁজে বের করবে না। আমি তারপরও যাব। আমি তো জোর করে ফেরত এসেছি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পালিয়ে গেছে তাদের নেতা, যে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি। গ্রেনেড হামলা করে আইভী রহমানসহ আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে। আমাকে যারা হত্যা করার চেষ্টা করেছে, যারা মানিলন্ডারিং কেস, দুর্নীতি, সেই পাওয়ার প্ল্যান্টের দুর্নীতি, সড়কের দুর্নীতি, যার বিরুদ্ধে আমেরিকার এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে, যে সাক্ষীতে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কৃষক লীগ আয়োজিত ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি’র উদ্বোধন করেন। ছবি: ফোকাস বাংলা
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। আর তার ছেলে তারেক জিয়া খুন, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি মামলার আসামি, যেখানে আমেরিকা পর্যন্ত যার ভিসা দেয়নি। ভিসা বাতিল করে দিয়েছে এবং যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে গেছে, সেই আসামি যার দলের নেতা তাদের মুখে বড় বড় কথা- আমরা না কি পালানোর পথ পাব না। আরে তোরা পালায়ই আছিস। এক পলাতক আসামির তত্ত¡াবধানে এত লম্বা কথাটা আসে কোথা থেকে।’
সরকার সহনশীলতা দেখাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা সহনশীলতা দেখাচ্ছি। কিন্তু আবার দেখলাম তাদের সেই অগ্নিসন্ত্রাস, সেই ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে তারা যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, ২০০১ এর নির্বাচনের পর যেভাবে আমাদের নেতা-কর্মীর ওপর অত্যাচার করেছে আমরা যদি তার এক ভাগ প্রতিশোধ নিতাম তো তোদের হদিসই পাওয়া যেত না। কারও হদিসই পাওয়া যেত না।’ ‘আমরা তো প্রতিশোধে বিশ্বাস করিনি। ঠিক আছে যার যার পার্টি করো, আমরা তো মানা করিনি। আমরা তো আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকতেই পারতাম না। পুলিশ দিয়ে বাধা দেওয়া হতো। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমার ওপর, সেদিন কিন্তু পুলিশ ছিল না।’
জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) প্রভু জিয়াউর রহমানও তো চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। পেরেছে? পারেনি। তারপর এরশাদ আর খালেদা জিয়া, এরা তো রীতিমতো একাত্তরের হানাদার বাহিনীর মতো গণহত্যা চালিয়েছে। ২১ হাজার নেতা-কর্মী হত্যা করেছে। চোখ তুলে নিয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে, দখল করেছে, বসতবাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে কলা গাছের চারা পুঁতেছে।’
বিএনপি এত সভা-সমাবেশ করার জন্য টাকা কোথায় পাচ্ছে, এই প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার প্রশ্ন কোথা থেকে এত টাকা পাচ্ছে। যত চুরি করা টাকা ছিল সেগুলো এখন বের হচ্ছে নাকি। একেক মিটিং করতে যে কতগুলো টাকা খরচ হচ্ছে টাকাগুলো কোথা থেকে আসছে।’
বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাবা-মা, ভাই সব হারিয়ে এ একটা প্রতিজ্ঞা নিয়েই এসেছি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করবো। আমাদের প্রত্যেকটা সহযোগী সংগঠন, সেই সংগঠনগুলোকেও সেভাবেই কাজ করতে হবে। যেন বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’
আওয়ামী লীগ যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য চক্রান্ত চলছে অভিযোগ তুলে দলের সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য বারবার বাধা এসেছে। তাদের প্রভুরা এখনো চক্রান্তে লিপ্ত।’
কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মতিয়া চৌধুরী, ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।