কাজির বাজার ডেস্ক
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে নানা কর্মসূচি নিয়ে অবস্থান করছে বিএনপি ও তার যুগপৎ সঙ্গীরা। দফাভিত্তিক আন্দোলন ধাপে ধাপে এক দফায় রূপ নিয়েছে বলে দাবি তাদের। বিএনপি ও তার যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের কর্মসূচির দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে শান্তি সমাবেশ নিয়ে মাঠেই ছিল আওয়ামী লীগ। এখন সরকারবিরোধী এক দফা আন্দোলনের গতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের কৌশল মোকাবিলা করে আন্দোলনে গতি ধরে রাখার চেষ্টা বিরোধীদের মাঝে। বিএনপি নেতাদের দাবি, বাংলাদেশের জনগণ যখন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের জন্য আন্দোলন করছে, তখন এসবকে দমন করার জন্য সরকার আবার আগের চেহারায় ফিরে এসেছে। গুম করছে, অত্যাচার-নির্যাতন করছে। এসব করে আন্দোলনকারীদের রুখে দিতে চায়। ইতিহাস বলে সেটা রোখা সম্ভব নয়। একই দিনে কর্মসূচি দিয়ে সংকট সৃষ্টি করতে চায় না বিএনপি। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনে কোনো বাধা সৃষ্টি করা হবে না বলে আশা তাদের।
গত ২৭ জুলাই রাজধানীতে মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি ও তার যুগপৎ সঙ্গীরা। একই দিনে রাজধানীতে শান্তি সমাবেশের ডাক দেয় ক্ষমতাসীনরা। টানটান উত্তেজনার মধ্যে মহাসমাবেশ এক দিন পিছিয়ে দেয় বিএনপি। একই সঙ্গে নিজেদের কর্মসূচিও পেছায় আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। মহাসমাবেশ থেকে গত শনিবার রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। একই দিনে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে ডিএমপির অনুমতি না পাওয়ায় কর্মসূচি স্থগিত করে আওয়ামী লীগ।
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উ™‚¢ত পরিস্থিতিতে জরুরি সভা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ওই সভা থেকে রোববার রাজধানীসহ সারা দেশে ওয়ার্ড, থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে গত শনিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার দেশের সব মহানগরে জনসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। জ্বালাও-পোড়াও প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া ও পত্রিকায় সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে খবর বেরিয়েছে যে, পুলিশের সামনেই এসব ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিও করে অপরাধীরা নির্বিঘেœ চলে গেছে। কারা এটা করতে পারে তা অনুমানের জন্য বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজেরা অপরাধ করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিচ্ছি।’ সরকারি লোকেরা, এজেন্সির লোকেরা, এমনকি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ওই ঘটনাগুলো ঘটিয়ে পরিকল্পিতভাবে ভিডিও করে মোটরসাইকেল নিয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে চলে গেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
গত রোববার রাজধানীর থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ ঘোষিত সোমবারের শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি বাতিল করা হয়। বিএনপি ঘোষিত আজকের জনসমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা আসবে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী জানান, সোমবার সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য শাহজাহান খান বলেন, ‘বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। আমরা আমাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। আমরা আশঙ্কা করছিলাম বিএনপি সেই পুরোনো পথে ফিরে যেতে পারে। গতকালের পর তো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেল তারা সেই জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতিতে ফিরে যাচ্ছে। আমরা শান্তি সমাবেশ করছিলাম।’ বিদেশিদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন এবং তাতে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া উচিত। সরকার পতনের প্রস্তুতি নেবেন আর সরকার পতন ঘটে যাবে- ওনারা বললেই এটা কোনোভাবেই হবে না। শাহজাহান খান বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে তাল রেখে ঘটনা বিশ্লেষণে যে কর্মসূচি সেটা বিভিন্ন ধরনের হতেই পারে। সেটা সময় বলে দেবে কোন সময় কোন কর্মসূচি আমরা নেব।’
গত শনিবার বিএনপির কর্মসূচিতে আহত হওয়া দলটির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ডিবি কার্যালয়ে খাওয়ার ছবি ও মহানগর আহŸায়ক আমান উল্লাহ আমানকে হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো উপহারের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার পায়। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, এই ছবি দেখার পর আন্দোলনকারী কর্মীদের মনোভাবে চিড় ধরতে পারে। একই সঙ্গে নেতাদের প্রতি কর্মীদের আস্থার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে আন্দোলনের গতিতে।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমানকে নিয়ে সরকার নাটক সাজিয়েছে। সরকার নিজেদের রক্ষা করার জন্য নাটক সাজিয়েছে। এর আগেও এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। সুতরাং এই জিনিসগুলো নেতা-কর্মী ও জনগণ গুরুত্বই দেয় না। এখন পাঠানো হচ্ছে ভিসানীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে এক দফা আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি পাবে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, বিগত দিনের মতো জ্বালাও-পোড়াও করে বিএনপি স্বরূপে ফিরেছে। আওয়ামী লীগের ভুলত্রæটিকে কেন্দ্র করে বিএনপি যতটুকু জনসমর্থন পাওয়ার দাবি করছিল এখন তা ফিকে হতে থাকবে। সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে বিএনপির বিদেশি পরামর্শদাতাদের যে অবস্থান, সেখানে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে তাদেরই।
বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাসের যুগে ফিরে গেছে দাবি করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেছেন, ‘বিএনপি তাদের পুরোনো চরিত্রে ফিরে গেছে। আমরা আগামী ১৫০ দিন মাঠে থাকব।’