সিন্টু রঞ্জন চন্দ
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২ জুন প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ১৮দিন বিরামহীন প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল সোমবার। সারাদিন বিরামহীন বৃষ্টিতে নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্ব›দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য শেষ মুহ‚র্ত পর্যন্ত প্রচারণা ও গণসংযোগ করেছেন। প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে গেছে সিলেট মহানগরীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার অলিগলি। ফলে নগরীতে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিলো।
কাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সকল ভোটকেন্দ্রে বসানো হবে সিসি ক্যামেরা। যা দিয়ে নির্বাচন কমিশন ভোট পর্যক্ষেণ করবেন।
এবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক ২৭টিসহ বর্তমান ওয়ার্ড সংখ্যা ৪২টি। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) ভোটার রয়েছেন ৬ জন। সিসিক নির্বাচনে মোট কেন্দ্র ১৯০ টি যেখানে স্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে ১ হাজার ৩৬৭ টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে ৯৫টি।
সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, আজ মঙ্গলবার ২০ জুন সকাল থেকে কেন্দ্র কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সরঞ্জাম পৌঁছানোর কাজ শুরু হবে।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল) সহ মোট আটজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্ব›দ্বীতা করলেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা) নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় মাঠে রয়েছেন সাতজন মেয়র প্রার্থী। এছাড়াও ৪২টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭২জন ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
সিসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে মোট ১৯০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে সেসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনাও করেছে পুলিশ। ‘গুরুত্বপূর্ণ’ শব্দটি মূলত ঝুঁকিপূর্ণ শব্দটি এড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী নগরীর ৪২ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮ ওয়ার্ডের সবকটি কেন্দ্র ‘গুরুত্বপূর্ণ’। মাত্র একটি ওয়ার্ডের সব কেন্দ্র স্বাভাবিক হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এসএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দাস বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দূরত্ব, কেন্দ্রে সীমানা প্রাচীর না থাকা ও প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতিÑইত্যাদি বিবেচনায় এ সব কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ থাকবে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভ্রাম্যমান ইউনিট, ক্রিটিক্যাল রেসপন্স ইউনিট ও আর্মড পার্সোনাল ক্যারিয়ারও থাকবে।
এদিকে, গত কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। এতে নগরীর অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। রয়েছে বন্যার শঙ্কাও। এ অবস্থায় কাল বুধবার ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে কয়েকটি ভোট কেন্দ্রের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের মাঠে জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
সোমবার দুপুরে সিলেট নগরীর ভার্তখলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার নছিবা খাতুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও পাশ্ববর্তী আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে গেছে। বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণিকক্ষের ভেতরেও পানি ঢুকে পড়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কুমারগাঁও এলাকার মইয়াচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। এই তিনটি বিদ্যালয়কেই সিটি নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।
পানি উঠে যাওয়ায় এসব কেন্দ্রে কীভাবে ভোটগ্রহণ করা হবে এমন প্রশ্নে সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের বলেন, সিলেটে চার পাঁচদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ৪/৫টি কেন্দ্রের মাঠে পানি উঠেছে। আজকেও আমাদের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ সবগুলো কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, যেসব কেন্দ্রের মাঠে পানি প্রবেশ করেছে সেগুলোর পানি নিষ্কাশন করে বালি ফেলে ভোটারদের দাঁড়ানোর উপযোগি করতে সিটি করপোরেশনকে বলেছি। তারা এ ব্যাপারে কাজ করবেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। মঙ্গলবার সকাল ১১ টা থেকে আবুল মাল আবদুল মুহিত কমপ্লেক্স হতে কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো শুরু হবে। আর সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ আজকেই শেষ হবে। মোট ১৯০ টি কেন্দ্রের ১৩৬৭ টি কক্ষ ও কক্ষের আশপাশে ১৬শ’র অধিক সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে দপুর ১২ টা পর্যন্ত ১১১.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভোটের দিনও বৃষ্টির শংকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ শাহ মোঃ সজিব হোসাইন।