মিনহাজ উদ্দীন শরীফ
প্রতিদিন পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে রেমেন্ডের ঘুম ভাঙে। বড় লোক বাবার এক মাত্র ছেলে বলে কথা। এবার ক্লাস টেনে পড়ে। পড়ালেখায় এতো টা ভালো না। স্কুলে গিয়ে ফার্স্ট বেঞ্চ দখল করে। প্রতিদিনের মতো আজও ফার্স্ট বেঞ্চ দখল করে বসে আছে তা ও একাই। স্যার ক্লাসে এসে দেখে এক প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে গেছে। কারণ রেমেন্ড নিজেকে নিয়ে সবসময় মগ্ন থাকে বাবার কোটি কোটি টাকা আছে। এই গরিমায় কাউকে মানুষ মনে করে না। কাউকে ধারে কাছে ঘেষতে ও দেয় না। স্কুলের কোনো টিচার কে যথাযথ ভাবে সম্মান করে না। রেমেন্ডের এই ধরণের মনমানুষীকতার জন্য গ্রামের কেউ পছন্দ করে না। সবাই রেমেন্ডকে নিয়ে সমালোচনা করে। একদিন রেমেন্ডের বাবা রেমেন্ডকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাম পরিদর্শন করবে আর তাকে দেখাবে ওর বাবাকে গ্রামের মানুষ কতটা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসে। শুক্রবার রেমেন্ডের স্কুল বন্ধ তাই ভোর বেলা বাবা; ছেলে রাজমহল ত্যাগ করে। রাস্তা বাহির হয়ে প্রথমে গ্রামের সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল বাবা ছেলে। প্রথমেই একজন দুধ বিক্রেতার সাথে দেখে; দুধ বিক্রেতা দূর থেকে বাবার অহংকারী ছেলেকে দেখে সালাম না দিয়েই রাস্তা ক্রস করে চলে গেলো। রেমেন্ডে বাবাকে বলে আব্বা এই দুধ বিক্রেতা এতো সাহস কোথায় ফেলো? যা আপনাকে কোনো কিছু না বলেই চলে গেলো? বাবা বললো রেমেন্ডে হয়তো এই নগন্য দুধ বিক্রেতা আমাকে দেখেনি। যাইহোক “এই দুধ বিক্রেতাকে পড়ে দেখে নিবো” এখন চল আরও অনেক কিছু দেখতে পারবে। এই বলে আবারও হাঁটতে শুরু করে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর একজন আম বিক্রেতার সাথে দেখা আম বিক্রেতা ঐ দুধ বিক্রেতার মতো কিছু না বলে রাস্তা ক্রস করে চলে গেলে। এই দৃশ্য দেখে বাবা ছেলে দু’জনই ক্ষেপে গেছে।
এই বলে আবারও হাঁটতে আরম্ভ করলো বাবা ছেলে তারপর দেখা হলো একজন শিক্ষকের সাথে। তিনি ও এড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করছেন। তখনই বাবা ও ছেলে জিজ্ঞাসা করতেছেন ঐ শিক্ষকে আমরা কারা জানেন? শিক্ষক; না একটু বলেন তো আপনারা কারা? বাবা উত্তর দিলো আমি এই রাজ্যের বিত্তবান আর ও আমার এক মাত্র ছেলে রেমেন্ড। তখন শিক্ষক বলেন তো আমি কি করবো আমার পথ ছাড়েন। আপনাদের মতো বড় লোকদের সাথে আমার কথা বলার কোনো যোগ্যতা নেই; সো আমাকে যেতে দিন এই বলে ঐ শিক্ষক চলে গেলো। রেমেন্ডের বাবা এখন একপর্যায়ে হতাশায় ভুগছেন আর বলছেন আগে তো গ্রামের মানুষ আমাকে খুব শ্রদ্ধা ও আমার আদেশ- উপদেশ পালন করতো। এই ক’দিনে এই গ্রামের মানুষ গুলার এমন কি হয়েছে যা সবাই আমাকে এড়িয়ে চলছে। রেমেন্ড বলবো আব্বা আমিও বুঝতেছি না কিছু! তখন বেলা প্রায় শেষের দিকে।তাই বাবা বলে চল্ আরেকটু এগিয়ে দেখি। রেমেন্ডেন বললো চলেন আব্বা। দুচার মিনিট হাঁটার পরে একজন মুয়াজ্জিনের সাথে দেখা হলো উনি তাদের এড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করে। তারপর রেমেন্ডের বাবা বলে মুয়াজ্জিনকে আপনি আমাকে কোনো কারণে এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন। মুয়াজ্জিন বলে আপনার সাথে আমি কথা বলতে আমি বাধ্য নই।
তখন সুরলা কন্ঠে বাবা বলে প্লিজ ভাই বললো না আমরা এমন কি করলাম যা গ্রামের কেউ কথা বলছে না বরং সবাই এড়িয়ে যাচ্ছে। তখন মুয়াজ্জিন সবকিছু খুলে বলে। দ্যাখেন ভাই আপনার প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ আপনার এই অহংকারী ছেলের প্রতি; আপনার ধনদৌলত আছে বলে আপনার ছেলে আমাদের গ্রামের পোলাপানদের মানুষ মনে করে না। ভাই আপনি তো জানেন এক কুঁড়ি আমের ঝুড়িতে যদি একটা আম নষ্ট হয় তাইলে সব কটি আমকে নষ্ট করার ক্ষমা রাখে।
রেমেন্ডের বাবা বললো হ্যাঁ তাতো ঠিক। মুয়াজ্জিন বলে ঐ নষ্ট আমটা আপনার ছেলে। তাই আমরা ও আমাদের ছেলেপেলেরা আপনাদের থেকে দূরে থাকার প্রচেষ্টা করছি। তখন রেমেন্ডের কেঁদে কেঁদে বলতেছে মুয়াজ্জিনের কাছে চাচা আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি। আমি আমার এমন করবো প্লিজ আপনি সবাইকে বলুন আমাকে ক্ষমা করে দিতে ও আমার সাথে কথা বলতো। মুয়াজ্জিন তখন গ্রামের সবাইকে ডেকে এনে বলে রেমেন্ডে ভুল বুঝতে পারছে এখন সবাই ওকে ক্ষমা করেন দাও। এবং রেমেন্ডের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে। মুয়াজ্জিন কথা মতো গ্রামের ছেলেপেলেরা রেমেন্ডের সাথে বন্ধুত্ব করে এবং রেমেন্ডে ও তারপর থেকে সবাই মিলেমিশে চলাফেরা করে।