ভূমিকম্পে ফের কেঁপে উঠল ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ সিলেট

13

ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল সিলেট। ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত সিলেটে শুক্রবার সকাল ১০ টা ৪৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে ভ‚মিকম্প অনুভ‚ত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৫। প্রায় ১৫ সেকেন্ড স্থায়ী এ ভ‚মিকম্পে বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। সিলেটে আগামী ২৪ ঘন্টায় আরও ভ‚মিকম্পের সতর্কবার্তা খবর পাওয়া গেছে।
এবার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিলো সিলেটেই। সিলেটের গোলাপগপঞ্জ উপজেলার কাছাকাছি স্থানে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় বলে জানিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অফিস। তবে ভূমিকম্পে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। গত তিনদিন ধরেই সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকেই টানা বৃষ্টি চলছে। বৃষ্টির মধ্যে ভ‚মিকম্পে নগরীজুড়ে আতংক দেখা দেয়।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোঃ সজিব হোসাইন বলেন, সিলেটের গোলাপগঞ্জ থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তি। পরপর দুই দফা কম্পন অনুভ‚ত হয়। তবে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কয়েকটি চ্যুতি সক্রিয় থাকায় সিলেটকে ভ‚মিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে ধরা হয়। ঘন ঘনই এ অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়ে থাকে। যা বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
নগরীর জালালাবাদ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সায়েম চৌধুরী জানান, বাসার সবাই ঘুমের মধ্যে ছিলাম। ভ‚মিকম্প অনুভ‚ত হওয়ার সাথে সাথে ভবনটি কেঁপে ওঠে। তবে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
জিন্দাবাজারের বাসিন্দা রুহেল আহমদ জানান, ভ‚মিকম্প হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পুরো পাচঁতলা ভবন কেঁপে ওঠে। অবিরাম বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ এই ভ‚মিকম্প। সিলেটে একদিকে বন্যার শঙ্কা অপরদিকে ভ‚মিকম্প। আল্লাহ জানেন। কি আছে আমাদের কপালে।
মার্কিন ভ‚তাত্তি¡ক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, এ ভ‚মিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেট থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে, যার গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।
এদিকে, সিলেটে টানা বৃষ্টিতে বন্যার শংকার মাঝেও এ ভ‚মিকম্পের ভীতি কাটার আগেই আগামী ২৪ ঘন্টায় ছোট-ছোট আরও ২/১ টি ভ‚মিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয় আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ ফেসবুক পোস্টে লিখেন, বাংলাদেশে শুক্রবার সকাল ১০ টা ৪৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে যে ভ‚মিকম্প অনুভ‚ত হয়েছে আমেরিকান ভ‚-ত্বাত্তিক অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে ভ‚মিকম্পটি ছিলো ৫ মাত্রার ও এর উৎপত্তিস্থল সিলেট শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্ব দিকে। ভ‚মিকম্পটি ভ‚-পৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়েছে। ভ‚মিকম্পটির ভৌগলিক অবস্থান ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৯২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ (২৪.৭৫০ক্কঘ ৯২.০৪২ক্কঊ)।
সিলেট শহরের মানুষদের আগামী ২৪ ঘন্টা সতর্ক থাকার অনুরোধ করবো। ৫ মাত্রার ভ‚মিকম্প অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী। ফলে আগামী ২৪ ঘন্টা ছোট-ছোট আরও ২/১ টি ভ‚মিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যে ভ‚মিকম্পগুলো প্রথম ভ‚মিকম্পের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে সৃষ্টি হয়ে থাকে।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অফিস। এছাড়াও আগামী কয়েক দিনে সিলেট জেলায় ১৪শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যার শংকার মাঝে শুক্রবার সকালের ভ‚মিকম্প সিলেটবাসীর মাঝে ভীতি জাগিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ভ‚মিকম্পে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে সিলেট অঞ্চল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গেল কয়েক বছরের সার্বিক পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেছে, দেশে ঘন ঘন ভ‚মিকম্প হচ্ছে। ছোট ছোট এই ভ‚মিকম্পগুলো যদিও বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় ডেকে না আনলেও সতর্কবার্তা দিচ্ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে।
দুই মাসেরও কম সময়ে দেশে চার ভ‚মিকম্প:
প্রায় ৫২ দিন অর্থাৎ দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে চারবার দেশে ভ‚মিকম্প হয়েছে। এসময় বিভিন্ন স্থানে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি হয়। অনেকেই ঘর থেকে বের হয়ে যান। তবে এসব ভ‚মিকম্পে এখন পর্যন্ত বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশে হওয়া চার ভ‚মিকম্পের কোনটিই শক্তিশালী ছিল না। সর্বশেষ শুক্রবার সকাল ১০টা ৪৮ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে রাজধানী ঢাকাসহ সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ থেকে ভ‚কম্পন অনুভ‚ত হয়।
প্রাথমিক তথ্য বলছে, ভারতের শিলংয়ে এর কেন্দ্র ছিল। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫। ভ‚মিকম্পের গভীরতা ছিল ভ‚পৃষ্ঠ থেকে ৭০ কিলোমিটার গভীরে। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ কম্পনের প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় আগে গত ৫ মে ভোরে দেশে আরেকটি ভ‚কম্পন অনুভ‚ত হয়। কেঁপে উঠেছিল রাজধানী ঢাকা। রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ওই ভ‚মিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার সিটি সেন্টার থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে দোহারে। সেদিনও ছিল শুক্রবার।
সেসময় মার্কিন ভ‚তাত্তি¡ক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, ভ‚মিকম্পটির উৎপত্তিস্থল দোহার থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্ব দক্ষিণ পূর্বে। যার গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার। সেসময় আবহাওয়া অফিস বলেছিল, এ ধরনের ছোট ছোট ভ‚মিকম্পে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা জানান, এ ধরনের ছোট ছোট ভ‚মিকম্পের উৎপত্তিস্থল সাধারণত কাছাকাছি জায়গায় হয়ে থাকে।
এর আগে ৩০ এপ্রিল রবিবার চট্টগ্রামে ৪ দশমিক ৬ মাত্রার কম্পন অনুভ‚ত হয়। এদিন দুপুর ১২টা ৫৬ মিনিটে অনুভ‚ত হওয়া ভ‚মিকম্পের উৎপত্তিস্থল অক্ষাংশ ২২ দশমিক ৯৩ ডিগ্রি উত্তর, দ্রাঘিমা ৯৪ দশমিক ১৯ ডিগ্রি পূর্ব মিয়ানমারের মাউলাইকে। রাজধানীর ভ‚মিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এর দূরত্ব ছিল ৪০০ কিলোমিটার। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৬। এটিও ছিল হালকা শ্রেণির ভ‚মিকম্প।
এদিকে ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলায় ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভ‚মিকম্প হয়েছিল। ওই ভ‚মিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভ‚গর্ভের প্রায় ১৭ কিলোমিটার নিচে। কেন্দ্রস্থল গভীর কম হওয়ায় এর প্রভাব বোঝা গিয়েছিল। এদিন রাত প্রায় সোয়া ২টার দিকে ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে উঠে নারায়ণগঞ্জ শহর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বেশ কিছু এলাকা। সেসময় বেশকিছু ঝাঁকুনিতে আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসেন স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য, গত এক যুগে ঢাকা ও এর আশে পাশে প্রায় বেশকিছু ভ‚মিকম্প হয়েছে। ভ‚মিকম্পগুলোর বেশিরভাগ কেন্দ্রস্থল ছিল সিলেট ও চট্টগ্রাম এলাকায়।