কাজিরবাজার ডেস্ক :
যাদের গাফিলতির কারণে প্রকল্প বিলম্বিত হচ্ছে, প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ বাড়ছে তাদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মন্ত্রী জানান, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা তাকে জানাতে হবে। প্রকল্পে যারা ডিজাইন করেছে তাদের খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
শেরেবাংলা নগরস্থ এসইসি সম্মেলন কক্ষে বুধবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গণভবণ থেকে ভার্চুয়ালী সভাপতিত্ব করে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা প্রদান করেন। একনেক সভায় শেষে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং-এ পরিকল্পনামন্ত্রী সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন ও অনুমোদিত প্রকল্পগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। ১১ হাজার ৩২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বর্ধিত ব্যয়ে নতুন ও পুরাতন আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন পাঁচ হাজার ১৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এবং বিদেশী ঋণ ছয় হাজার ১৬৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
ছয় হাজার ৩৫৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পটির খরচ ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনাগুলো দেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যায়, সংশোধনের সময় দুই-একটি আইটেম নতুন আসে। যার জন্য প্রকল্পের খরচ বেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন হলো-যখন প্রকল্প তৈরি করেছিলেন, এসব বিষয় কি দেখে দেননি? আপনারা প্রকল্পের সাইটে যাননি? নাহলে নতুন সেতু কোথা থেকে পাচ্ছেন? এটি কেনো আগে এলো না? মন্ত্রী বলেন, এটি শুধু প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন নয়, আমারও প্রশ্ন। আপনাদেরও প্রশ্ন।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সংশোধন করতে গিয়ে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেকগুলো আইটেম নতুন চলে এসেছে। মূল প্রকল্প ডিজাইনে এসব ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, কারা ডিজাইন করেছে? অর্ডার দিয়েছেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সংশ্লিষ্ট সকলকে, ওই সকল ব্যক্তিকে চিহ্নিত করুন। কাদের গাফিলতির জন্য আমাদের প্রকল্পের ডিজাইনটি ইনকারেক্ট (ভুল) হলো, আমাদের সময় ও অর্থ অপচয় হলো। তাদের বিরুদ্ধে আপনারা আইনানুগ, বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। আগামীতে যাতে না হয়, সকলের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন যে আপনারা যার যার অবস্থান থেকে সাবধান হয়ে যান।’
ব্রিফিং-এ পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার সদস্যদেরকে তখনো বলেছি, এখনো বলছি, প্রধানমন্ত্রীর মাথা থেকে কিছু অবজারভেশন আসে। আমাদের মাথা থেকে কেনো আসবে না। সুতরাং এ সকল বিষয়ে আমরা অধিকতর সচেতন হবো। প্রকল্প যখন আসে, তখন তাড়াহুড়ো থাকে। সবাই এসে বলে, ভাই দেন না করে, দেন না করে।’
প্রকল্প ভুলভাবে একনেক থেকে পাস হওয়ার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কোনো দায় আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, অস্বীকার করছি না। এটি হয়েছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, খুঁজে বের করুন কাদের দায়ে এ অবস্থা হলো। তাদের বিরুদ্ধে শুধু ব্যবস্থা নয়, তিনি জানাতে বলেছেন যে, কী ব্যবস্থা নিলেন আমাকে (প্রধানমন্ত্রীকে) অবহিত করতে হবে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় থাকতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, ‘প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বড় বড় সেতু নির্মাণে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে হবে। জনগণের প্রয়োজনে তৈরি করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে সেতু নির্মাণের কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত না হয়। এখন সেতুগুলো এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয়।’ এম এ মান্নান জানান, প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘শুধু বড় ঠিকাদাররা যেন কাজ না পান। ছোট ঠিকাদাররাও যাতে কাজ পান ওই বিষয়ে নজর রাখতে হবে।’”
উল্লেখ্য, পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি তিন হাজার ৯২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা খরচে ২০১৭ সালে অনুমোদন পায়। সংশোধনীতে তা দুই হাজার ৫৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ছয় হাজার ৪৫৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। মূল প্রকল্পে ১৩০টি (২৬ হাজার ৭৪০ মিটার) সেতু নির্মাণে বরাদ্দ ছিল তিন হাজার ৩৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সংশোধনে ১৩২টি সেতু (৪১ হাজার ৪৩ মিটার) নির্মাণে খরচ পাঁচ হাজার ৫৩১ কোটি ছয় লাখ টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণ খাতে খরচ বেড়েছে দুই হাজার ১৬৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়ও বেড়েছে। এটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। সংশোধনীতে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) বাস্তবায়ন করছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লীপ্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো: জাকির হোসেন আকন্দ জানান, প্রকল্প সংশোধনের কারণ ব্যাখ্যা করে পরিকল্পনা কমিশনকে এলজিইডি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র যাচাই করা ন্যূনতম ভার্টিক্যাল অ্যান্ড হরিজন্টাল ক্লিয়ারেন্স এবং হাইড্রোলজিক্যাল অ্যান্ড মরফোলজিক্যাল স্টাডি রিপোর্ট বিবেচনায় সরজমিনে সেতুর স্থান পরিদর্শন করে ডিজাইন চূড়ান্ত করা এবং চূড়ান্ত করা ডিজাইন অনুযায়ী সেতুর দৈর্ঘ্য মূল ডিপিপির প্রস্তাবিত দৈর্ঘ্যরে চেয়ে বেশি হওয়ায় ব্যয় বেড়েছে। তিনি বলেন, আটটি সেতু ছিল পাঁচ শ’ থেকে দেড় হাজার মিটারের মতো দীর্ঘ। এক শ’ মিটার ও তার বেশিও সেতু আছে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো বর্ধিত দুই হাজার ৯০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা এনভারমেন্টাল সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প, ২৭২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে টাঙ্গাইল জেলার ১০টি পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন, ১০৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ, ৪২৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন, ৩৫৩ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল উদ্যোক্ত এবং উদ্ভাবক ইকো সিস্টেম উন্নয়ন, চার হাজার ৩৪৭ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্পনগর উন্নয়ন এবং ৩৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপে শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প।