হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
এ সময় পানিতে থৈ থৈ করার কথা থাকলেও শুকিয়ে আছে হবিগঞ্জের হাওর। শুধু কি হাওর, নদী-নালা ও খাল-বিলেও নেই পানি। এতে জেলায় কমে গেছে মাছ। অন্যদিকে আউশ ও রোপা আমন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। বোরো মৌসুমে জমির উর্বরতা নিয়েও শঙ্কার শেষ নেই তাদের। এ যেন হাওরবাসীর এক বোবা কান্না।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সবচেয়ে ভাটি এলাকা হিসেবে পরিচিত আজমিরীগঞ্জ উপজেলা। একে ভাটি এলাকার রাজধানীও বলা হয়। যার অর্ধেক এলাকাই বছরের অর্ধেক সময় জলমগ্ন থাকে। জেলার সবচেয়ে নিচু ভ‚মি হিসেবেই পরিচিত এটি। হাওর বেষ্টিত এ উপজেলাকে ঘিরে রেখেছে সুরমা, কুশিয়ারা, কালনী, কৈখাল, ভেড়ামোহনার মতো খরস্রোতা নদী। এছাড়া আছে অসংখ্য ছোট ছোট নদী, নালা ও খাল। এ উপজেলার দু’পাশ ঘিরে আছে সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলা। এরপরই ধারাবাহিকভাবে সবচেয়ে ভাটি বানিয়াচং, লাখাই ও নবীগঞ্জ উপজেলা।
এসব উপজেলার দুই তৃতীয়াংশই হাওরবেষ্টিত। প্রতি বছরই এপ্রিল, মে মাসে এসব এলাকার হাওরে পানির দেখা মেলে। আর জুন মাসে ভর বর্ষা থাকে। নৌকায় যাতায়াত করতে হয় হাওরের প্রায় সবগুলো গ্রামেই। বর্ষায় তাদের একমাত্র ভরসাও এটি। আর হাওরের অথৈ পানি যেন এক সৌন্দর্যের লীলাভ‚মিতে পরিণত হয়। অভাব হয়না মাছেরও। বর্ষার পানির সঙ্গে বেড়ে ওঠে আউশ ও বোনা আমন ধান। কিন্তু এ বছর বর্ষার মৌসুমেও হাওরে পানির দেখা মিলছে না। কোথাও পানি নেই।
নেই আউশ ও বোনা আমন ধানের আবাদ। যে কয়েকটি জমিতে ধানের আবাদ করেছেন কৃষকরা তাও ফলন হবে কি-না তা নিয়ে সন্দিহান। তাদের মনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে হাওরে পানি না এলে জমিতে পলিও আসবে না। ফলে আগামী বোরো আবাদও ভালো হবে না। মাছও পাওয়া যাবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর আউশ ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৬৪ হাজার ৩৬৫ হেক্টর। কিন্তু আবাদ হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার ৩১৯ হেক্টর। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫৭১, মাধবপুরে ৫ হাজার ৭০০, চুনারুঘাটে ৬ হাজার ৬২০, বাহুবলে ৩০০, নবীগঞ্জে ১৫০০, লাখাইয়ে ৮০০, বানিয়াচংয়ে ১ হাজার ৮২৫ ও আজমিরীগঞ্জে ৩ হেক্টর। বোনা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ১৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৪২০ হেক্টর। এর মধ্যে মাধবপুরে ২ হাজার ২০০, লাখাই ৮০০ ও বানিয়াচংয়ে ৪২০ হেক্টর। আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামের অরবিন্দু দেব জানান, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর হাওরে পূর্ণ বর্ষা মৌসুমেও পানি হয়নি। অন্য বছর এ সময় হাওরে পানি পরিপূর্ণ থাকতো। পানি না হলে জমিতে পলি পড়ে না। পলি না হলে বোরো ফসলও ভালো হয় না।
একই গ্রামের আমির হোসেন জানান, এ বছর বৃষ্টি নেই। অন্য বছর এ সময় হাওর ভর্তি পানি থাকে। পানি না হলে জমির বল হয় না। হাওরে যদি পানি না থাকলে ধানের মতো মাছও হবে না। তাবিদুর রহমান বলেন, আজমিরীগঞ্জ উপজেলাটি জেলার সবচেয়ে ভাটি এলাকা। এখন মৌসুমে আমাদের হাওরে পূর্ণ পানি থাকার কথা। পানি সময়মতো না হওয়ায় হাওরে দিব্যি গরু ঘাস খায়। বানিয়াচং উপজেলার প্রথম রেখ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, এখন বর্ষাকাল। কিন্তু এলাকায় এখনো আল্লাহ বৃষ্টি দেননি। এখন ইরি ধান উঠতে শুরু করেছে। পানি থাকলে এ ধান আরও লাগাতে পারতে পারতাম। লাকি ধানও রোপণ করতে পারতাম। কিন্তু পানির অভাবে আমরা কিছুই করতে পারছি না। ছিলাপাঞ্জা গ্রামের মো. শামীম বলেন, পানির অভাবে জমিতে ধান করা যায়নি। কোনো ধানই পানির অভাবের কারণে করা যাচ্ছে না। আমরা হাওরের মানুষ কীভাবে বাঁচব। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. আশেক পারভেজ বলেন, এ বছর সারাদেশের মতো হবিগঞ্জেও বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। অন্য বছরের মতো আউশ মৌসুমে যে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা তা এবার হয়নি। ফলে আউশের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা অর্জন সম্ভব হয়নি।
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, যেহেতু এখন বৃষ্টি হচ্ছে তাই কৃষকরা রোপা আমনের বীজতলাগুলো প্রস্তুত করবে। তবে আমনের ক্ষেত্রে এটি সমস্যা হবে না। আউশের লক্ষ্যমাত্রা আমরা আশা করি আমনের আবাদে পুষিয়ে নিতে পারবো।