মো. শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর থেকে
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর সদরের বুকচিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী নলজুর নদীর উপর এলজিইডি অধিদপ্তরের অধীনে দৃষ্টিনন্দন আর্চ ব্রিজের কাজ এগিয়ে চলছে। এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাটির গভীরে থাকা পলিথিন ও আবর্জনা। যদিও আগের পুরনো ব্রিজটি ভেঙে নতুন আর্চ ব্রিজের কাজ শুরু হওয়ায় বিকল্প দুই পথ দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। বিকল্প পথে চলাচলে অনেক কষ্ট হলেও নতুন আর্চ ব্রিজের কাজ দ্রæত হচ্ছে দেখে জনমনে অনেকটা স্বস্তি বিরাজ করছে।
জানাগেছে, বিগত এরশাদ সরকারের আমলে নলজুর নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হয়। যা স্থানীয়দের কাছে বড়পুল নামে পরিচিত ছিল। তখন এ ব্রিজটি হওয়ায় সিলেটের সাথে জগন্নাথপুর উপজেলাবাসীর সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হয়। ফলে যুগযুগ ধরে মানুষ এ ব্রিজ দিয়ে চলাচল করে আসছিলেন। তবে সময়ের পরিক্রমায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় বিগত কয়েক বছর ধরে এ ব্রিজে যানজট লেগেই থাকতো। ব্রিজটির প্রস্থ কম হওয়ায় সংকুলান হচ্ছিল না। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের প্রচেষ্টায় ১৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে এখানে নতুন আর্চ ব্রিজ নির্মাণ কাজের অনুমোদন হয়। এ ব্রিজ নির্মাণকাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাটি বাংলা এন্টারপ্রাইজ। চলতি ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ থেকে কাজ শুরু হয়েছে। শেষ করতে হবে আগামী ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে। এর মধ্যে প্রায় ২৫ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাকি ৭৫ ভাগ কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলজিইডি কর্তৃপক্ষের জোর তদারকিতে কাজের এমন অগ্রগতি হচ্ছে বলে অনেকে জানান।
১১ জুন রোববার আবদাল মিয়া, আজিজ মিয়া, সুমন মিয়া, ফারুক আহমদ, পলিন গোপ সহ পথচারীদের মধ্যে অনেকে জানান, আমাদের বড়পুলটি ভেঙে ফেলায় নতুন করে ভোগান্তিতে পড়েছি। হেলিপ্যাড হয়ে বিকল্প স্টিল ব্রিজ দিয়ে ও শহীদ মিনার হয়ে দেবে যাওয়া পুরনো ছোটপুলটি মেরামত করে দেয়ায় কোন রকমে চলাচল করা যাচ্ছে। এসব বিকল্প পথগুলো ছোট হওয়ায় ছোট গাড়ি সহ পায়ে হেঁটে চলাচল করতে গিয়ে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও নতুন আর্চ ব্রিজের কাজ হচ্ছে দেখে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। আমরা চাই দ্রæত এ ব্রিজের মান সম্পন্ন কাজ শেষ হোক। তা হলেই মানুষের ভোগান্তি লাঘব হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোঃ সোহরাব হোসেন বলেন, এ আর্চ ব্রিজ নির্মাণ করতে মাটির ১৩০ ফুট গভীরে মোট ৩০টি ফাইলিং পিলার বসানো হচ্ছে। এর মধ্যে ১৬টি পিলার বসানো হয়ে গেছে। বাকি পিলার বসাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাটির ৩০ ফুট নিচে থাকা পলিথিন ও আবর্জনা। এ ব্রিজ চলাকালীন সময়ে পশ্চিমপ্রান্তে পিলারের গোড়ায় হাট-বাজারের অনেক ময়লা-আবর্জনা ফেলা হতো। এসব আবর্জনার সাথে থাকা পলিথিনের কারণে ৩০ ফুট গভীরে যাওয়ার পর আর ফাইলিং পিলার যাচ্ছে না। ফলে গত ১১ দিন ধরে পিলার বসানোর কাজ বন্ধ রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফাইলিং বসানোর আগের মেশিন দিয়ে কাজ হচ্ছে না। যে কারণে এখন আরো উচ্চ ক্ষমতাধর মেশিন আনা হচ্ছে। এ মেশিন আসলে অচিরেই আবার পিলার বসানোর কাজ শুরু হবে। তবে নদীর পূর্বপ্রান্তে পিলার বসানো শেষ হওয়ায় এখন বেইজের কাজ চলছে। তিনি দাবি করে বলেন, এ পর্যন্ত ব্রিজের ২৫ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। আশা করছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই মূল ব্রিজের কাজ শেষ হয়ে যাবে।