কাজির বাজর ডেস্ক
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আসন্ন (২০২৩-২৪) অর্থবছরের বাজেটে ‘জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা’ খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিট বাজেটের ৫৫ শতাংশই ব্যয় হবে পুলিশবাহিনীতে। বাকি ৪৫ শতাংশ ব্যয় হবে বিজিবি, কোস্ট কার্ড, আনসার এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগে। তবে পুলিশের সঙ্গে বরাদ্দ বাড়ছে আনসার বাহিনীতেও। এমন হিসাব ধরে ২৯ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দ আছে ২৯ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। বরাদ্দের পাশাপাশি আসন্ন বাজেটে সুরক্ষা সেবা বিভাগে অগ্রাধিকার পাচ্ছে অগ্নিনির্বাপণ, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ানোসহ সাতটি খাত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হবে। এখন পর্যন্ত বাজেটের সম্ভাব্য মোট ব্যয়ের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ থাকছে মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে চলতি বাজেটের ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ বরাদ্দ আছে জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, আনসার বাহিনীর উন্নয়ন খাতে চলতি অর্থবছরে কোনো বরাদ্দ ছিল না। করোনার কারণে এ বাহিনীর উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু আগামী অর্থবছরে আনসার বাহিনীর উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ থাকছে। এজন্য এ বাহিনীর মোট বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে। তিনি বলেন, আগামী বছর পুলিশের বরাদ্দও বাড়ছে। পাশাপাশি তাদের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রাও চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী দিনে বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের মধ্যে জননিরাপত্তা বিভাগের বরাদ্দ বাড়লেও কমছে সুরক্ষা সেবা বিভাগের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মতে, পুলিশবাহিনীতে আন্তর্জাতিক শান্তি মিশনের নির্ভরশীলতা কমে যাওয়ায় রাজস্ব আয়ের পরিমাণও কমছে। তবে রাজস্ব আয় বাড়াতে পুলিশ বিভাগে নতুন নতুন ক্ষেত্র শনাক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মিতব্যয়িতার সঙ্গে দক্ষতা ও ফলপ্রসূ কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
পহেলা জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপিত হওয়ার পর কার্যকর হবে পহেলা জুলাই থেকে। ঠিক এর পাঁচ মাস পরই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। স্বাভাবিক নিয়মে যে কোনো নির্বাচনে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ দুটি বাহিনীর তৎপরতা ব্যাপক হারে বাড়বে। কারণ, মাঠপর্যায়ে যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখাসহ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। পুরো বাহিনীর সক্রিয়তার সঙ্গে নানা ধরনের ব্যয় জড়িত থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে পুলিশ বিভাগে ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। কারণ, নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা করতে হয়। এজন্য জ্বালানি, গোয়েন্দা, অপারেশনাল ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে ক্রয় করতে হবে নিরাপত্তাসামগ্রী।
বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় এবং নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ধরেই হিসাব করা হয়েছে। এছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৪ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ১ হাজার ২৬ কোটি টাকা এবং এনটিএমসি পাচ্ছে ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত।