মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
চৈত্রের শেষ থেকে চলমান তাপপ্রবাহ আর অনাবৃষ্টির আঁচ লেগেছে মৌলভীবাজারের চা বাগানে। চা উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। নতুন কুঁড়ি আসছে না চা গাছে। তাই কাঁচা পাতা উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না। ক্ষতি হচ্ছে নতুন প্লান্টেশনের। হ্রাস পাচ্ছে মাটির উর্বরতা, যার কারণে একটু বেশি বৃষ্টি বা বন্যা হলেই মাটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মৌসুমের শুরুতেই চাশিল্প প্রতিক‚লতার মুখে পড়ায় কমে যাচ্ছে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা। বাগানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, প্রচÐ তাপদাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে বাড়ছে না শ্রীমঙ্গলের চা গাছের কুঁড়ি। আসছে না নতুন পাতাও।
কোথাও কোথাও জ্বলে গেছে গাছ। প্রতিক‚ল পরিস্থিতিতে চায়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে সেচের পাশাপাশি প্রতি চারাগাছের মধ্যে মাটি গর্ত করে পচা গোবরের সঙ্গে কিছু টিএসপি মিশিয়ে আবার মাটিতে মিলিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চা বিশেষজ্ঞরা।
লোডশেডিংয়ের কারণে গত বছরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি চাশিল্প। দেশে মোট ১৬৭টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় ৯২টি। বাংলাদেশ চা বোর্ড চলতি বছর দেশে চা উৎপাদন ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি ধরে রেখেছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩ লাখ ৬৪ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। জানা যায়, দেশের প্রতিটি চা বাগানে মার্চে নতুন পাতা উত্তোলন শুরু হয়। এ সময় প্রতিদিন বাগানে ১০-১৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। গাছ যত বেশি পানি পায় তত বেশি সজীব হয়; তত বেশি পাতা দেয়। আর যদি নির্দিষ্ট পরিমাণের বৃষ্টি না হয়, তাহলে গাছে নতুন পাতা আসবে না। অনেক বাগানে ডিজেলচালিত সেচ দিয়ে নতুন চারাগাছ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে পূর্ণবয়সী গাছের পাতা তাপদাহে জ্বলে যাচ্ছে। শ্রীমঙ্গল ভুরভুরিয়া চা বাগানের চা শ্রমিক রিকিয়াশন জানান, এ সময়ে সারাদিনে যেখানে ২৫ থেকে ৩০ কেজি পাতা তোলার কথা, সেখানে পাতা উঠছে ১০ থেকে ১২ কেজি।
বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ইসমাইল হোসেন জানান, চায়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উত্তম। তবে চা গাছ সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারে। এর ওপরে গেলেই খরায় পুড়বে চা। তবে চা বাগানে শেড ট্রির কারণে এই তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত সহনীয়। বর্তমানে মৌলভীবাজারের তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে গাছের পাতায় অবস্থিত ক্লোরোফিলের মাধ্যমে গাছ যেভাবে খাদ্য আহরণ করে, তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি পার হলেই চা গাছ এই সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। চা গাছের বাঞ্জি দশাকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মনে করেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. রফিকুল হক। তিনি জানান, এ পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। চা বাগানে সমন্বিত পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। চলমান অবস্থায় তরুণ চা গাছের গোড়ায় কচুরিপানা ও লতাপাতা দিতে হবে। প্রতিটি বাগানেই জলাধার তৈরি করতে হবে এবং সেচ পদ্ধতি চালু রাখতে হবে।