মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি

17

বাংলাদেশের জনশক্তির বড় একটি বাজার মালয়েশিয়া। বাংলাদেশ থেকে গত ছয় মাসে এক লাখ ৩৭ হাজার লোক মালয়েশিয়া গেছেন। আবার মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদেরই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। অনেককেই কোনো না কোনোভাবে হয়রানি কিংবা প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে। মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তির আওতায় দেশটিতে বর্তমানে পর্যায়ক্রমে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। তারই আওতায় গত ৩০ জানুয়ারি ১৭ জন শ্রমিককে কলিং ভিসায় দেশটিতে পাঠানো হয়। কিন্তু ভিসার মেয়াদ না থাকায় এক দিন পর ১ ফেব্রæয়ারি তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। গত ১৫ ফেব্রæয়ারি একটি রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ার আরেকটি কম্পানিতে ২৯ জন কর্মী পাঠায়। এর মধ্যে ১০ জন শ্রমিককে গ্রহণ করে বাকি ১৯ জনের ইমিগ্রেশন সার্ভারে ডাটা না পাওয়ায় তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়। এসব মানুষ এখন পথে পথে ঘুরছেন। বিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে, শিগগির তাঁদের মালয়েশিয়া পাঠানো হবে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণের এক ব্যতিক্রমী ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল ২০১২ সালের নভেম্বরে স্বাক্ষরিত ‘জিটুজি’ পদ্ধতির সমঝোতা স্মারকটির মাধ্যমে। তবে ওই স্মারকটি ২০১৬ সালে একটি সুবিধাবাদী চক্রের স্বার্থে প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়। ‘জিটুজি প্লাস’ নামের প্রতিস্থাপিত ওই স্মারকের অধীন মাত্র ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির একটি সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি হয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণ চলতে থাকে। ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়াÑউভয় প্রান্তেই দুর্নীতিবাজ কিছু গোষ্ঠীর বড় আখড়ায় পরিণত হয়েছে এই সেক্টর। দরিদ্র বিদেশগামী কর্মীদের স্বার্থের কথা কেউ ভাবে না। অভিবাসী কর্মী ও রিক্রুটিং এজেন্সির স্বার্থ সঠিকভাবে রক্ষা করে একটি অভিবাসীবান্ধব নিয়োগব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা যাবে না কেন? জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। বিদেশে বাংলাদেশের জনশক্তি প্রশংসিত হচ্ছে, চাহিদাও রয়েছে। দেশের রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ও অর্থপ্রবাহ সচল রাখতে জনশক্তির ভ‚মিকাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে অপবাদ যেন বাংলাদেশের ললাটলিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা মনে করি, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ উভয়েরই এই ইস্যুটি যৌথভাবে মোকাবেলা করতে হবে। একটি অভিবাসী কর্মীবান্ধব নিয়োগপ্রক্রিয়া করা খুব কঠিন কাজ নয়। আর তেমনটি করা গেলে তা অর্থনৈতিক উন্নয়নে জোরালো ভ‚মিকা অব্যাহত রাখবে।