সিন্টু রঞ্জন চন্দ
জরুরি মেরামত, লাইনে ক্রটির সংস্কার কাজ, প্রকল্প কাজ, গাছপালা কর্তন ও সংরক্ষণ কাজের নামে একের পর এক উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নেওয়া হলেও বিদ্যুৎ গ্রাহকরা লোডশেডিং’র অওয়াতাধীন রয়েই গেছেন। রমজানেও এর কোন ব্যতিক্রম হয়নি। বিনা বিজ্ঞপ্তি ও বিদ্যুৎ বন্ধের ঘোষনা না দিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অনেক এলাকা ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়। এতে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) ১, ২ ও ৩ এর আওতাধীন এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বছরের পর বছর জুড়ে থাকেন ভোগান্তিতে। এরপরও শেষ হয়না নির্মাণ ও বৈদ্যুতিক সংস্কার কাজ।
জানা যায়, সিলেট নগরী ও মহানগরীসহ পিডিবির আওতাধীন এলাকায় ঝড়-বৃষ্টি এলেই উধাও হয়ে যায় বিদ্যুৎ। এ যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে এ ভোগান্তির শেষ নেই। তারাবির নামাজ, সেহরি ও ইফতারসহ যে কোনো সময়ে সামান্য দমকা হাওয়া অথবা বৃষ্টি হলেই থাকে না বিদ্যুৎ। একবার বিদ্যুৎ গেলে প্রায়ই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরে না বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা।
শুধু বৃষ্টিই নয়, সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) ৩ এর আওতাধীন এলাকায় দিনে অন্তত ৫ থেকে ৭ বার আসা-যাওয়া করে বিদ্যুৎ। রমজান মাসে বিদ্যুতের এমন ভোগান্তি ক্ষুব্ধ করে তুলেছে গ্রাহকদের। তাঁদের অভিযোগ, পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতির কারণেই এমনটা হচ্ছে।
গত দু’দিন পূর্বে সিলেট নগরীতে হঠাৎ হালকা ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ চলে যায়। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেলেও দেখা নেই বিদ্যুতের।
পিডিবি ৩ এর আওতাধীন শিববাড়ী এলাকার বাসিন্দা জাহানারা বেগম জানান, বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার কারণে ঠিকমতো গৃহস্থালি কাজ করা যায় না। এ ছাড়াও মোটর দিয়ে পানি তুলতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, রমজান মাসে এমনিতেই রোজা রেখে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েন। বাচ্চারা পড়ার টেবিলে বসলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুতের এমন আসা-যাওয়া যেন চোর-পুলিশ খেলার মতো- এই আসে, আবার নেই। বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফজুলর রহমান এর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই-আরেফিন এর কাছে এ বিষয়ে জানতে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩, বিউবো এর নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামল চন্দ্র সরকার বলেন, সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩ এর এলাকায় ১০টি বিদ্যুৎ ফিডার ও একটি ৩৩ হাজার লাইন রয়েছে। এই কেন্দ্রে গ্রাহকদের ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়ে থাকে। এই ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়ে থাকি কুমারগাঁও গ্রীড উপকেন্দ্র থেকে। এই মেগাওয়াট দিয়েই সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩ এর গ্রাহকদের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বিজ্ঞপ্তি বা গ্রাহকদের না জানিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয় এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরইকান্দিস্থ (মিস্ত্রি মসজিদ) পিডিপি ৩ কার্যালয় হতে ৩৩ হাজার ভল্ডের লাইন খাম্বায় টানা হচ্ছে। এটা আমার কার্যালয় থেকে বঙ্গবীর, চন্ডিপুল, হুমায়ুন রশীদ, শিববাড়ী হয়ে পারাইচক এলাকার ড্রাম্পিংয়ে গিয়ে শেষ হবে। এছাড়া বছর জুড়ে চলবে এই প্রকল্পের কাজ। তিনি বলেন, এই লাইন টানার ফলে গ্রাহকদের বিদ্যুতিক সমস্যা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। ফলে লাইনে গ্রাহকদের ক্রটিও কমে আসবে। তিনি বলেন, লাইনে ত্রæটি থাকায় অনেক সময় সমস্যা হয়। তবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবসময় তৎপর রয়েছে। আবহাওয়ার ওপর হঠ্যৎ হালকা ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে যায় এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অটোমেটিক লাইন বন্ধ হয়ে যায়। আবার যখন আবহাওয়া ভালোর দিকে চলে আসে তখন পূর্ণরায় বিদ্যুৎ লাইন চালু হয়। ফলে বর্ষার অনেক সময় কিছুটা লোডশেডিং হয়ে থাকে বলে নির্বাহী এই কর্মকর্তা জানান।