সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন : বিশ্বনাথে কৃষক ছরকুম ও স্কুলছাত্র সুমেল হত্যার দ্রæত বিচার নিশ্চিত করার দাবি

52

স্টাফ রিপোর্টার

বিশ^নাথের চাউলধনী হাওরে চাঞ্চল্যকর স্কুুলছাত্র সুমেল হত্যার প্রধান আসামিকে হার্টের রোগী ও পাগল সাজিয়ে মামলা থেকে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া কৃষক ছরকুম আলী দয়াল হত্যা মামলারও অগ্রগতি নেই।
মামলা দুটি তরান্বিত করে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রæত নিশ্চিত করা এবং হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী হাওরের সীমানা নির্ধারণের আগে চাউলধনী হাওর লিজ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন পরিষদের নেতারা।
শনিবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন হাওরপাড়ের ২৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের সমন্বয়ে গঠিত চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন পরিষদ। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সদস্য ও সুমেল হত্যা মামলার বাদী ইব্রাহিম আলী সিজিল।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘স্কুুলছাত্র সুমেল হত্যা মামলার ৩২ জন আসামির মধ্যে ৩১ জন আসামি জামিন লাভ করায় এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ডাবল মার্ডারের আসামি সাইফুলকেও মামলা থেকে রক্ষার জন্য নানা টালবাহানা হচ্ছে।’
সিজিল বলেন, ‘২০২১ সালের ১ মে আমাদের কৃষি জমিতে জোরপূর্বক ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা শুরু করে সাইফুল বাহিনী। এতে বাধা দিলে তারা পাখির মতো গুলিবর্ষণ এবং দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে। এতে মানিক মিয়ার ছেলে দশম শ্রেণীর ছাত্র সুমেল, তার বাবা-চাচাসহ বেশ কয়েক জন গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর সুমেলকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।’ তিনি আরও জানান, এ মামলায় উচ্চ আদালত চারবার, সিলেট জেলা জজ তিন বার ও বিচারিক আদালতে তিনবার প্রধান আসামি সাইফুলের জামিনের নামঞ্জুর করেন। কিন্তু আসামি পক্ষ মামলাটিকে বানচাল ও বিচারকার্যকে বিলম্ব করার ও বিচার না হওয়ার জন্য সাইফুলকে অসুস্থ, পাগল, হার্টের রোগী সাজানোর পরিকল্পনা করে।
মামলার বাদী বলেন, ‘স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা মামলাটি বর্তমানে সিলেটের দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালে (৬০৬, ২০২২) বিচারাধীন। বাদী পক্ষ ইতোমধ্যে ৭ বার স্বাক্ষীর জন্য হাজিরা দিলে আসামি পক্ষে নানা অজুহাতে স্বাক্ষ্যগ্রহণে অযথা বিলম্ব করছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ৩০ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের নির্ধারিত তারিখে সাক্ষী আদালতে হাজির হলেও সাইফুলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এ কাজটি সম্পাদন হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘ইতোপূর্বে হাইকোর্ট, জেলা জজ, বিচারিক আদালতে সাইফুলকে কোনো ধরনের অসুস্থতার বিষয় উল্লেখ করেনি। এ ঘটনায় আমরা বিস্মিত, হতবাক এবং অবিলম্বে আমাদের স্বাক্ষ্যগ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’ স্বাক্ষ্য না দেওয়ার জন্য সাক্ষীদের ভয়ভীতি, হুমকি-ধামকি ও বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দিয়ে বিরত রাখতে আসামিরা চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি সাইফুল বাহিনী ছরকুম আলী দয়ালের মালিকানাধীন জমির পানি সেচ দিয়ে অন্যত্র ফেলছিল। এ খবর পেয়ে দয়াল তার স্বজনদের নিয়ে সেখানে গিয়ে বাধা দিলে তাকে হত্যা করা হয় এবং বেশ কয়েকজনকে আহত করা হয়। এ ঘটনায় দয়ালের ভাতিজা আহমদ আলী বাদী হয়ে বিশ্বনাথ থানায় মামলা করতে থানায় গেলে প্রথমে নানা টালবাহানা হয়। পরবর্তী মামলা রেকর্ড হয়। মামলাটি এখনও তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে।
মূলত চাউলধনী হাওরে সরকারি খাস জমির সাথে গরিব কৃষকদের জমি লিজ দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই দুই ঘটনার সূত্রপাত। উচ্চ আদালত সীমানা নির্ধারণের আগে জমি লিজ না দেওয়ার নির্দেশ দিলেও স্থানীয় প্রশাসন তাতে পাত্তা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ কৃষকদের।
সংবাদ সম্মেলনে ইব্রাহীম আলী সিজিল বলেন, ‘সাবলিজ সাইফুল বাহিনী হাওরে গত দেড় যুগ ধরে ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করে। তারা কৃষকদের জমি দখল করে এবং দুটি হত্যাকাÐ ঘটানোর পাশাপাশি শতকোটি টাকার ধানের ক্ষতি, মাছ ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে হাওরটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’ তিনি আরও জানান, হাওরের সীমানা নির্ধারণে কৃষকরা উচ্চ আদালতে রিট করলে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন কোনো এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে গড়িমসি করেন। অপর এক রিট পিটিশনের ভিত্তিতে উচ্চ আদালত পুনরায় ডিজিটাল জরিপের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণের নিদের্শ প্রদান করেন। কিন্তু তাতেও সীমানা নির্ধারণ হবে কি না আমাদের সন্দেহ রয়েছে। বড় অঙ্কের টাকার মাধ্যমে প্রশাসনের একটি চক্র কৃষকের কয়েক হাজার একর ভ‚মিসহ চাউলধনী হাওরটি সাইফুল বাহিনী ও ভুয়া মৎস্যজীবী দশঘর সমিতিকে পুনরায় লিজ দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা। এ ব্যাপারে মৎস্য ও ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবের প্রতি কৃষকদের ভ‚মি লিজ না দেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।
কৃষকরা স্কুলছাত্র সুমেল ও ছরকুম আলী দয়াল হত্যা মামলার দ্রæত বিচার নিশ্চিত করা এবং হাওর জরিপ না হওয়া পর্যন্ত লিজ না দিয়ে কৃষকদের জমি রক্ষার দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাচাও আন্দোলন পরিষদের আহŸায়ক আবুল কালাম, যুগ্ম আহŸায়ক আরিফ উল্লাহ সিতাব, নজির উদ্দিন, সামসুদ্দীন মেম্বার, মাওলানা ছমির উদ্দিন, সদস্য আরশ আলী, সিদ্দেক আলী, ছালেহ আহমদ, হারিছ আলী, আমির আলী, হুছন আহমদ, দয়াল হত্যা মামলার বাদী আহমদ আলী, আব্দুল করিম, পাবেল আহমদ, লিটন মিয়া, নিহত স্কুলছাত্র সুমেলের মা খয়রুন নেছা ও বোন সুমা বেগম উপস্থিত ছিলেন।