প্রতিনিয়ত যেভাবে ওষুধের দাম, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও হাসপাতালের খরচ বেড়ে চলেছে তাতে নিম্নবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে চিকিৎসার খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গতকাল জাতীয় একটি দৈনিকে চকিৎসা ব্যয় সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ঢাকায় অবস্থিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) রোগীপ্রতি খরচ এক বছরের ব্যবধানে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হাসপাতালে যাঁরা চিকিৎসা নিতে আসেন তাঁদের বেশির ভাগই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে আসেন এবং তাঁদের একটি বড় অংশই নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ। চিকিৎসার খরচ বহন করতে গিয়ে তাঁদের হিমশিম খেতে হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে ওষুধের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। বেড়েছে অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রীর দামও। সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যের শয্যা ছাড়া বাকি সবই কিনে আনতে হয়। ফলে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের অস্ত্রোপচারের খরচ প্রায় লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা দরিদ্র রোগীদের বহন করা প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়ে। রোগীদের এমন দুর্ভোগের কথা শিকার করে হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও জানান, একজন রোগীর চিকিৎসা ব্যয় গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যান্ডেজের গজ কাপড়, প্লাস্টার থেকে শুরু করে ওষুধপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জামÑপ্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। জানা যায়, চিকিৎসার খরচ এভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক দরিদ্র রোগী চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যেতে বাধ্য হয়। সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। অথচ এই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দুই বছরের ব্যবধানে অস্ত্রোপচারের রোগী বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পায়ের পাতায় ব্যবহৃত ‘ফুট ড্রপ’ ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার টাকা, হাঁটুর টুপি বা নি ক্যাপের দাম ২১০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫০ টাকা, হাঁটুর বন্ধনীর দাম এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে দুই হাজার ৬০০ টাকা হয়েছে। হাঁটার ক্রাচ তিন মাস আগে বিক্রি হতো ৪০০ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়।
অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে চিকিৎসার ব্যয় অনেক বেশি। আমরা মনে করি, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ঔষধ প্রশাসনকে চিকিৎসা ব্যয় কমাতে উদ্যোগী হতে হবে। বিশেষ করে ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর মূল্য যেন অযৌক্তিকভাবে না বাড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের রোগীদের চিকিৎসার খরচ সরকারিভাবে বহন করার পদক্ষেপ নিতে হবে।