শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
একজন স্বাস্থ্যকর্মী ছটফট করছেন। তার ছটফটানি দেখে চিকিৎসক ও সহকর্মীরা দিগবিদিক ছোটাছুটি করছেন। আতঙ্কগ্রস্ত চিকিৎসকরা দ্রুত তাকে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে সিলেটে প্রেরণ করেন। একজন স্বাস্থ্য কর্মীর এমন অবস্থা দেখে তার সহকর্মী ও চিকিৎসকদের মনে বিষাদের ছায়া। ৭জুলাই বেলা দেড়টার দিকে বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন চিত্র দেখা গেলো। জানা গেলো ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। তার করোনা উপসর্গ রয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি কিন্তু হাসপাতালে তার অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে শহরের একটি হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনাকালে সেবা দিতে গিয়ে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ও স্টাফসহ এপর্যন্ত ৮জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি বালাগঞ্জ এবং ওসমানীনগর দুই উপজেলার সাধারণ মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগে জনবল সংকট। একের পর এক চিকিৎসক ও স্টাফরা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে তারা সেবাদানে হিমশিম খাচ্ছেন। এরমধ্যেও তারা হাসপাতালের আউটডোর-ইনডোরে রোগীদের সাধ্যমত সেবা দিচ্ছেন। ভর্তি থাকা রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সেবা পেতে কিংবা খাবার-দাবারে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। দুতলার দক্ষিণ দিকে চোখে পড়লো প্রস্তুত করে রাখা আইসোলেশন ওয়ার্ড। তবে সেখানে কোনো রোগী ভর্তি নেই।
জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ৩১ শয্যার বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরীকৃত ১৯৯টি পদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। বর্তমানে ৪জন চিকিৎসক ও ৫জন নার্স চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। অবিভক্ত বালাগঞ্জ উপজেলা থেকে ওসমানীনগর উপজেলা গঠিত হওয়ায় ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এখনো বালাগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের অধিভুক্ত। বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বাড়তি দায়িত্ব পালন করছেন। ৭ জুলাই পর্যন্ত বালাগঞ্জে ১৯০ জনের করোনা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট এসেছে- ১৬৭ জনের, পজেটিভ-২১ জন, সুস্থ-১৪জন ও বর্তমানে আক্রান্ত-৭জন। একই তারিখ পর্যন্ত ওসমানীনগর উপজেলায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে- ৩০৪ জনের, রিপোর্ট এসেছে ২৪৭ জনের, পজিটিভ ৪২জন, সুস্থ ৩৫জন, মারা গেছেন-৩জন ও বর্তমানে আক্রান্ত-৪জন।
বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: এস এম শাহরিয়ার বলেন, সিলেটের অন্যান্য উপজেলা হাসপাতালে সরকারি গাড়ি বরাদ্দ দেয়া হলেও আমরা কোনো গাড়ি পাইনি। এরপরও মানুষকে সেবা দিতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। করোনার নমুনা পরীক্ষার ‘টেস্ট টিউবের’ অপ্রতুলতা থাকায় আমরা নিজ উদ্যোগে তা সংগ্রহ করে সাধারণ মানুষদের সেবাদানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (অরএমও) ডা: মামুন আহমদ জানালেন, তিনি করোনা উপসর্গ নিয়ে কয়েক দিন ছুটি কাটানোর পর রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। হাসপাতাল এলাকায় চিকিৎসকদের আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই। পুরনো আবাসন ভবনগুলো পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ। হাসপাতালের ছাদ ছুঁইয়ে মেঝেতে পানি পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকট, নেই পরিচ্ছন্নকর্মী। সেবাদানের স্বার্থে পকেটের টাকা দিয়ে মাসিক বেতনে পরিচ্ছন্নকর্মী রাখতে হচ্ছে। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমাদেরকে সেবা দিতে হচ্ছে। ডা: মামুন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণাধীন ভবনটি দেশের উপজেলা হাসপাতালগুলোর মধ্যে এটি প্রথম সাততলা বিশিষ্ট ভবন হিসিবে নির্মিত হচ্ছে। সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী সাহেব এই ভবনটির নির্মাণ কাজের তদারকি করছেন।