আমাদের দেশে শিশু নির্যাতনের ঘটনা অহরহই ঘটছে। সামান্য কারণে শিশুদের আঘাত করা হচ্ছে। কোনোভাবেই শিশু নির্যাতন বন্ধ করা হচ্ছে না। সমাজ দিন দিন অধঃপতনের খাদে নেমে গেছে বলেই শিশুর নিরাপত্তা সুরক্ষিত নয়। এমনকি সমাজও প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। মানুষের মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলোও যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। বড় হয়ে যে শিশুরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের হাল ধরবেÑতাদের সঙ্গে কেন এই নিষ্ঠুর আচরণ!
মানুষের সহজাত মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সর্বত্রই অসহিষ্ণুতা দেখা দিয়েছে। এরই প্রভাব পড়ছে সমাজ মানসে। প্রকাশিত খবরটি যেন সে কথাই বলছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের হিসাব ধরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যু, ধর্ষণের পরে হত্যা, ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে নিহত হয় মোট ৫১৬ জন শিশু। নিহতদের মধ্যে ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ৬৪, গাজীপুরে ৩৬ এবং নারায়ণগঞ্জে ৩৩ জন শিশু রয়েছে। মোট নির্যাতনের শিকার হয় এক হাজার ৮৮ জন শিশু। এর মধ্যে ভুক্তভোগী ১৩০ জন শিশুর বয়স ছয় বছরের নিচে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের মতে, ২০২২ সালে ৯৩৩ শিশু ও কিশোরী যৌন নির্যাতনের ঘটনায় ৫৪২ জন শিশু ও কিশোরী ধর্ষণ এবং ৮১ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে ২০ জন শিশুকে; ৪১ জন প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে; যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১৪৩ জন শিশু ও কিশোরী। ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে ১৪৭ জন কিশোরী। এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছে ১৩ জন কিশোরী। একই বছর শিশুদের প্রতি সহিংসতার ঘটনায় শারীরিক নির্যাতনে ৩১৬ ও ২৮৮ জন শিশু-কিশোরী হত্যার শিকার হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে ৩১৭ জন শিশু। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের হিসাব মতে, ২০২২ সালে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ১২২ জন কন্যাশিশু। উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছে ১০৪ জন কন্যাশিশু। যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে তিন কিশোরীকে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫১ জন কন্যাশিশু। অপহরণসহ অন্যান্য কারণে ৯২ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে।
অতীতে সমাজ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে দেশে। সেসব ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্তদের আইনের হাতে সোপর্দ করার পর কয়েকটি ঘটনায় শাস্তিও হয়েছে। কিন্তু তার পরও থেমে নেই শিশু নির্যাতনের ঘটনা। এজাতীয় সব অপরাধের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। সমাজ কবে শিশুর জন্য নিরাপদ হবে?