স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের অনুসারী পরিচয় দিয়ে নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় ফিরোজ ম্যানশনের জমি দখলের চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। যদিও এ জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এ নিয়ে সম্প্রতি ওই পক্ষের লোকজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে সেখানে ভাংচুরও চালিয়েছে। রবিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন জায়গার মালিক মৃত ফিরোজ খানের পুত্রবধূ জোহেলা বেগম রুমি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শাহী ঈদগাহে তার শ্বশুর মৃত ফিরোজ খানের নামে জেএলনং ৯১ মহলে ঈদগাহ স্থিত সেটেলমেন্ট জরিপ অনুযায়ী ১৯ টি দাগ নম্বরে সম্পত্তির পরিমাণ মোট ১.১৯২৫ একর। দাগ নম্বরগুলো যথাক্রমে বিভিন্ন খতিয়ানে ১০১৬৭, ১০১৬১, ১০১৬৫, ১০১৬৬, ১০১৬৯, ১০১৮০, ১০১৬৮, ১০১৬৩, ১০১৬৪। এ জায়গা নিয়ে বড়বাড়ির বাসিন্দা সুয়েবনবী গংদের সাথে বিবাদ চলছিল। এ নিয়ে মামলাও চলমান। আদালতে সমুদয় কাগজপত্র জমা প্রদান করা আছে এবং বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।
এরই মাঝে গত ২৯ মে বিকেলে দলবেঁধে জোরপূর্বক হামলা চালিয়ে আমাদের সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা চালায় একদল সন্ত্রাসী। তারা কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দান করে। হামলাকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো- টিলাগড়ের বহুল আলোচিত বাবলা চৌধুরী, ছয়েফ আহমদ, আবির, শাহরিয়ার, সিদ্দীক, ফারুক ও অপু গং। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তবে এর আগে তারা ব্যাপক ভাংচুর করে এবং মার্কেটে থাকা সিসি ক্যামেরা, সফটওয়ার মনিটর এবং কয়েকটি দোকানের মালামাল নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েকটি দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে এ সময় হামলাকারীরা আনুমানিক দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকাও লুট করে নেয়। তাছাড়া ফিরোজ ম্যানশন লেখা দুটি সাইনবোর্ড খুলেও হামলাকারীরা ওই ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
তার দাবি, ওইদিন হামলাকারীরা ফিরোজ ম্যানশনের ১২ টি দোকানের ব্যবসায়ীদের দোকান থেকে বের করে দিয়ে নিজেদের সাথে আনা তালা দিয়ে ১২ টি দোকান তালাবদ্ধ করে চলে যায়। পরে রাতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে আমরা সিলেট কোতোয়ালী থানায় অবস্থান করা অবস্থায় খবর আসে স্থানীয় কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ঘটনাস্থলে এসে ভাড়াটিয়া ১২ টি দোকান মালিকদের সাথে নিয়ে মিটিং করছেন। পরে আমরা এসে জানতে পারি মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী মাস থেকে দোকানের ভাড়া আমাদের না দিয়ে বিবাদী সোয়েবনরী কাছে দেয়া হবে। এতে আমরা আরো বেশি হতাশা এবং আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ি। তাদের বাদ দিয়ে কাউন্সিলর আজাদের এমন সিদ্ধান্ত অমানবিক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এ সিদ্ধান্তের একদিন পর ৩০ মে বৃহস্পতিবার বিকেলে সুয়েবনবীর অপর সহযোগী শাহী ঈদগাহস্থ ন্যাশনাল মেগা সপের মালিক গিয়াস উদ্দিনের কাছ থেকে চাবি এনে স্থানীয়দের মাধ্যমে মার্কেটের ১২টি দোকান কোঠা খুলে দেওয়া হয়। তবে, সকল দোকানদেরকে শুধুমাত্র ঈদ পর্যন্ত ব্যবসা করার সুযোগ প্রদানের নিমিত্তে দোকানগুলো খোলে দেওয়া হয় এবং মাস শেষে ১২ টি দোকানের ভাড়ার টাকা মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুয়েবনবীর কাছে প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়। বিষয়টি থানা পুলিশকে অবগত করা হলে উভয়পক্ষকে থানায় হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হলেও সুয়েবনবী পক্ষের কোনো লোকজন সেখানে উপস্থিত হননি। এর পর থানা পুলিশ ৩১ মে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টায় উভয় পক্ষের স্ব স্ব আইনজীবীসহ উপস্থিত থাকার নির্দেশ প্রদান করলে আমি আমাদের সমুদয় কাগজপত্রসহ থানায় হাজির হই। তবে অপর পক্ষ হাজির হয়নি।
জোহেলা বেগম রুমি বলেন- ১৯৬৬ সাল থেকে আমার শ্বশুরের মৃত্যু পরবর্তী ধারাবাহিকভাবে এই বাড়িটিতে শ্বশুরের ৬ ছেলে ও ৮ মেয়ে তাদের পরিবারসহ বসবাস করে আসছি। জায়গাটি দখলে নিতে সুয়েব নবী দীর্ঘদিন ধরে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘটনার পর ভূমিখেকো ওই চক্রটি পালাক্রমে আমাদের ফিরোজ ম্যানশনের চারপাশে টহল দিচ্ছে। এমনকি রাত জেগেও ওই চক্রটি আমাদের পাশ দিয়ে দাপটের সাথে চলাফেরা করছে। এতে করে আমার স্বামী, দেবর ও ননদের স্বামীরা নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না। এর ফলে আমাদের বিশাল পরিবার আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতির শিকার হচ্ছি।
এছাড়া বর্তমানে এই যায়গা নিয়ে মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে সুয়েব নবী ও তাঁর আমমোক্তার সৈয়দ আশরাফ আহমদ সুমন তাদের লোকজন দিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে আসছে। এ অবস্থায় আমার ছোট ননদের স্বামী আরিফ আহমদ শনিবার (১ জুন) সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় পরিবারের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন (ডায়েরি নং-১৯১২)। এ ঘটনায় সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মোহিতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।