মতিয়া চৌধুরীই হতে যাচ্ছেন সংসদ উপনেতা ! পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে শেখ হাসিনার উপর

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
একাদশ জাতীয় সংসদের উপনেতা পদটি ফাঁকা বেশ কয়েক মাস হলো। বর্ষীয়ান নেতা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদটি শুন্য রয়েছে। এই শুন্যতা পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ট দল আওয়ামী লীগ থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তিনিই হবে সংসদ উপনেতা। আওয়ামী লীগের প্রবীণ কয়েকজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে এই পদ ঘিরে আলোচনায়। তবে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই হবেন উপনেতা।
বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই বৈঠকেই বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। এরপরই স্পিকার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।
জানা গেছে, আজকে বৈঠক থেকেই সংসদ উপনেতার নাম প্রস্তাব করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে মত চাইবেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে সংসদ সদস্যরা উপনেতা পদে মনোনয়নের ভার শেখ হাসিনার ওপরই দেবেন।
সংসদের বিধান বলছেÑ সংসদ উপনেতা পদের জন্য কোনো ভোটাভুটি দরকার হয় না। সংসদ নেতা তার মতটি স্পিকারকে জানান।
এখানে সংসদীয় দলের সদস্যদের মত নিয়ে সংসদ নেতা যে নামটি প্রস্তাব করবেন স্পিকার সেটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠাবেন। এই পদের জন্য কোনো শপথ নেওয়ার দরকার হয় না। তবে সংসদ উপনেতা মন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুবিধা পেয়ে থাকেন।
সংসদীয় আইন অনুযায়ী, সংসদ উপনেতা নিয়োগে বাধ্যবাধকতা নেই। বিএনপি তাদের সময়ে এ পদে কাউকে মনোনীত করেনি। তবে আওয়ামী লীগ বরাবরই তাদের সিনিয়র কোনো নেতাকে দিয়ে এ পদটি অলঙ্কৃত করেছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণত দলের বর্ষীয়াণ নেতাদের উপনেতা পদে বিবেচনা করে থাকে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথমে জিল্লুর রহমানকে সংসদ উপনেতা নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগ। তিনি ‘৯৬ আমলেও দায়িত্বে ছিলেন। পরে তিনি শপথ নেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে। সংসদ উপনেতা হন সাজেদা চৌধুরী। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় তিনি ছিলেন সংসদ উপনেতা। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী গত ১১ সেপ্টেম্বর মারা যান। তার মৃত্যুতে শূন্য হয় পদটি।
সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর থেকেই আলোচনা চলছিল তার উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে। সাধারণত দলের প্রবীণ নেতাদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেওয়া হয় এই পদে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেনÑ আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম প্রমুখ।
তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ রাষ্ট্রপতি পদেও আলোচনায়।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, মতিয়া চৌধুরীকে দলের কেউ কেউ পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবেও বিবেচনা করছিলেন। কিন্তু দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্যেষ্ঠ এই নেতাকে সংসদে তার সহযোগী হিসেবেই রাখতে চান। জাতীয় সংসদে সংসদ নেতা অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পাশের দীর্ঘদিন ছিলেন সাজেদা চৌধুরী। তিনি মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসেন মতিয়া চৌধুরী।
শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত মতিয়া চৌধুরী পাঁচবারের সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের সরকারে তিনি তিনবার কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য নন।
গেল বছরের ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া পদক ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপনেতা পদে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সে বিষয়ে মত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একজন নারীকেই সংসদ উপনেতা করব।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সবাই ধরে নেয় যে, সংসদ উপনেতা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী তার মত পরিবর্তন করলে অন্যদের ভাগ্য খুলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে শেখ হাসিনার ওপর।
তবে আওয়ামী লীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সংসদের উপনেতা হিসেবে মতিয়া চৌধুরীকেই বেছে নিতে যাচ্ছেন। এবারের অধিবেশনে মতিয়া চৌধুরীকে সংসদ উপনেতা করার পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কর্মসূচিতে বেশ মমতায় ও শ্রদ্ধায় মতিয়া চৌধুরীকে কাছে টানেন। সর্বশেষ মেট্রোরেলের উদ্বোধনের পর ট্রেনে চড়ার সময় প্রথমে প্রধানমন্ত্রী তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে পাশে বসিয়েছিলেন। পরে মতিয়া চৌধুরী আসার পর মেট্রোরেলে তাকে পাশে নিয়ে বসান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি মতিয়া চৌধুরীর প্রতি নিজের সন্তুষ্টির কথা দলের নেতাদের কাছেও প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ থেকে অনেকে মতিয়া চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি কিংবা সংসদের উপনেতা হিসেবে বিবেচনা করছিলেন।
তবে কেউ কেউ বলছেন, প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমুও উপনেতা পদে বিবেচনায় রয়েছেন। দলের তার ত্যাগ, আদর্শ ও সততার প্রশংসা আছে। আমু ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। তিনি আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি পদেও ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ দলটির গুরুত্বপূর্ণ নানা পদে ছিলেন তিনি।