মো.শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কৃষিতে আসছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। সনাতন পদ্ধতি ছেড়ে নতুন পদ্ধতির সাথে পরিচিত হচ্ছেন কৃষকরা। এরই অংশ হিসেবে জগন্নাথপুরে এই প্রথম সমলয় পদ্ধতিতে শুরু হয়েছে বোরো চাষাবাদ। এতে খরচ ও সময় দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। অকাল বন্যার আগেই ধান গোলায় তোলা যাবে। যুগযুগ ধরে কৃষকরা সনাতন পদ্ধতিতে বোরো আবাদ করে আসছেন। এখন শুধু নতুন এ সমলয় পদ্ধতি বুঝা ও ভরসা রাখা নিয়ে কৃষকদের একটু সময় লাগবে। প্রথম বারের মতো যারা নতুন এ পদ্ধিতে জমি চাষাবাদ করছেন, তারা লাভবান হলে আগামী বোরো মৌসুমেই অধিকাংশ কৃষকরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন নতুন পদ্ধতিতে জমি আবাদ করতে।
সরকার দেশে কৃষি বিপ্লব ঘটাতে আন্তরিক ভাবে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের বন্যা প্রবল অঞ্চল হাওর এলাকায় এ নতুন পদ্ধতি চালু করেছে। এ পদ্ধতিতে জমি চাষাবাদ করলে বাঁচবে খরচ ও সময়। অকাল বন্যার আগেই ঘরে উঠবে ধান। তাই নতুন এ পদ্ধতিতে জমি চাষাবাদ করতে মাঠে-ময়দানে গিয়ে কৃষকদের উৎসাহিত করছেন জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে, কিভাবে বীজতলা তৈরি, বীজ ধান বপন ও জমিতে ধান রোপন পদ্ধতি।
প্রথমে সমতল জমিতে সারিবদ্ধ ভাবে পরিমাপ মতো ছোট ছোট টিনের ট্রে বসাতে হবে। ট্রে-তে অল্প মাটি দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হবে। বীজতলা তৈরি হলে বীজধান বপন করতে হবে। বীজধান বপনের মাত্র ১৫ থেকে ১৬ দিনের মাথায় ধানের চারা রোপনের উপযোগী হয়ে যায়। যা বর্তমান সনাতন পদ্ধতিতে এক থেকে দেড়মাস সময় লাগে। ধানের চারা রোপনের উপযোগী হয়ে গেলে হালচাষ দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হবে। জমি প্রস্তুত হয়ে গেলেই অত্যাধুনিক ধান রোপনের মেশিন দিয়ে ধান রোপন করতে হবে। মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে এক বিঘা জমি রোপন করতে পারে এ মেশিন। এতে লাগে মাত্র ২ লিটার পেট্রোল। পেট্রোলের মূল্য মাত্র ২৫০ টাকা। যা সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমি রোপন করতে কমপক্ষে ৪ জন শ্রমিকের পুরো একদিন সময় লাগে। এতে জমির মালিককে গুণতে হয় কমপক্ষে ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা। বর্তমান সনাতন পদ্ধতিতে ধান রোপনের কমবেশি ৪ মাস পর ধান কাটা শুরু হয়। নতুন এ পদ্ধতিতে ধান রোপন হলে কমবেশি ৩ মাসের মধ্যে ধান কাটা সম্ভব। তাই সেই হিসেবে নতুন এ সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হলে খরচ ও সময় বাঁচবে অনেক। সেই সাথে অকাল বন্যার আগে ধান কাটা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নতুন এ সমলয় পদ্ধতিতে এক বিঘা জমি রোপনের জন্য ছোট ছোট ৩০টি টিনের ট্রে লাগে। এসব ট্রে বর্তমানে সরকার কৃষকদের উৎসাহিত করতে কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্যাকেজের আওতায় বিনামূল্যে প্রদান করছে। এছাড়া বাজার থেকে কিনতে গেলে প্রতিটি ট্রে এর মূল্য ১০০ থেকে ১৫০ টাকা হতে পারে। ধান রোপনের অত্যাধুনিক মেশিনের মূল্য ৫ লাখ টাকা। যা সরকার ৭০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের প্রদান করছে। একজন বা কয়েকজন কৃষক মিলিত হয়ে একটি মেশিন কিনতে পারেন। অথবা একজন মেশিন কিনলে অন্য প্রান্তিক বর্গাচাষীরা ভাড়ায় ধান রোপন করাতে পারবেন।
এ বিষয়ে ১২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, এবার এই প্রথম জগন্নাথপুরে সমলয় পদ্ধতিতে উপজেলার খাগাউড়া এলাকায় ১৫০ বিঘা বোরো জমি চাষাবাদ হচ্ছে। আশা করছি, কৃষকরা ভালো ফলন পাবেন। নতুন এ পদ্ধতিতে জমি আবাদ করলে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। অর্থ, সময় ও শ্রম বাঁচবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অকাল বন্যার আগে ফলন ঘরে তোলা যাবে। সেই সাথে স্থানীয় বেকার ও উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাই নতুন এ সমলয় পদ্ধতিতে বোরো আবাদ করতে আমরা কৃষক ভাইদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে উৎসাহিত করছি।