আটক ভারতীয় পাইলটকে ফেরত দিল পাকিস্তান

179

কাজিরবাজার ডেস্ক :
উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে পাকিস্তান। স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ পাক সেনাদের একটি কনভয়ে ওয়াঘা সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয় অভিনন্দনকে। সেখানে তার মেডিক্যাল চেকআপ হয়। পাক রেঞ্জার্সের ‘বিটিং দ্য রিট্রিটে’র পরই ভারতীয় কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় অভিনন্দনকে।
এ দিন সকালে তাকে প্রথমে ইসলামাবাদ থেকে লাহোরে সড়ক পথে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ নিয়ে যাওয়া হয় ওয়াঘা-অটারী সীমান্তে। অভিনন্দনকে স্বাগত জানাতে বিকেলেই হাজির হন সেনা ও এয়ারফোর্সের শীর্ষ কর্মকর্তারা। হাজির হন এয়ার ভাইস মার্শাল আর জি কে কপূর। এ দিন সকালেই সীমান্তে পৌঁছে যান অভিনন্দনের বাবা এয়ার মার্শাল এস বর্তমান এবং মা শোভা বর্তমান। অভিনন্দনকে অভিনন্দন জানাতে সকাল থেকে ওয়াঘা-অটারী সীমান্তে হাজির হন কয়েক শ’ মানুষ। ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে সীমান্ত এলাকা। সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন সীমান্তের এ পারে কখন আসবেন অভিনন্দন। ঘোষণা বৃহস্পতিবারেই হয়ে গিয়েছিল ভারতীয় বিমান সেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দেবে পাকিস্তান। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার বক্তব্যে ‘পিস জেসচার’ শব্দ দুটো ব্যবহার করার পর পরই বলেন, শুক্রবার মুক্তি দেয়া হবে অভিনন্দনকে। কোথায়, কখন তাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে তা নিয়ে একটা জল্পনা ছিল। অবশেষে সেই জল্পনার অবসান হয় এ দিন সকালেই। অভিনন্দনের দেশে ফেরাকে ঘিরে সীমান্তে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা ও এনডিটিভির।
দেশে ফিরে যেসব পরীক্ষার সম্মুখীন হতে পারেন অভিনন্দন : দেশে ফিরেই কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন অভিনন্দন? সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, অসীম সাহসের পরিচয় দিয়েছেন অভিনন্দন বর্তমান। ১৯৭০ সালে তৈরি পুরনো মিগ-২১ নিয়ে অত্যাধুনিক পাক যুদ্ধবিমান এফ-১৬ তাড়া করে সে দেশে ঢুকে পড়েন তিনি। এর জন্য অবশ্যই প্রশংসা প্রাপ্য তার। কিন্তু শত্রু দেশের হেফাজত থেকে ফিরেছেন, দফায় দফায় জেরার মধ্য দিয়ে যেতে হবে তাকে। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে যদিও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা হয়নি। তবে অভিনন্দন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন, বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তার ইঙ্গিত মিলেছে। ওয়াঘা সীমান্ত থেকেই বাড়ি ফিরতে পারবেন না অভিনন্দন। বরং সেখান থেকে সরাসরি বিমানবাহিনীর গোয়েন্দাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে তাকে। বেশ কিছু ডাক্তারী পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে অভিনন্দনকে। দেখা হবে তিনি ফিট কিনা। বন্দীদের শরীরে অনেক সময় মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেয়া হয়, যার মাধ্যমে আড়ি পেতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয় শত্রুপক্ষ। অভিনন্দনের শরীরে সে রকম কোন চিপ বসানো হয়েছে কিনা, তা স্ক্যান কেরে দেখা হবে। মনোবিদের কাছেও নিয়ে যাওয়া হবে অভিনন্দনকে। বন্দী থাকা অবস্থায় ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত তথ্য হাতাতে শত্রুপক্ষ তাকে অত্যাচার করেছে কিনা তা জানার চেষ্টা করা হবে। পাকিস্তানে কোন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে কিনা দেখা হবে তাও। অভিনন্দনকে জেরা করতে আনা হতে পারে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) এবং রিসার্চ এ্যান্ড এ্যানালিসিস উইং’য়ের (র) কর্মকর্তাদেরও। তবে সচরাচর পাইলটদের তাদের হাতে তুলে দেয় না বিমানবাহিনী। তাই অভিনন্দনের ক্ষেত্রে তা নাও হতে পারে। পাকিস্তানে পা রাখা থেকে ওয়াঘা সীমান্ত পার করা, গোয়েন্দাদের প্রতি মুহূর্তের সবিস্তার বর্ণনা দিতে হবে অভিনন্দনকে। বন্দী অবস্থায় তার কাছে কী কী জানতে চাওয়া হয়, তা জানাতে হবে তাকে। বুধবার তিনি বিমানে ওঠা থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বিমান ভেঙ্গে পড়া পর্যন্ত গোটা ঘটনার পুনর্র্নিমাণ করবেন গোয়েন্দারা।
পাক সেনাবাহিনী তার মিগকে নিশানা করতে কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, তাও জানার চেষ্টা করা হবে। তার সঙ্গে থাকা কোন কোন নথি তিনি নষ্ট করতে পেরেছিলেন এবং কী কী নথি পাক সেনার হাতে পৌঁছেছে তারও তালিকা তৈরি করা হবে। শত্রুপক্ষের হাতে বন্দী ছিলেন অভিনন্দন। সেখানে তাকে আপোসের কোন প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল কি না, তাকে ব্যবহার করার কোন চক্রান্ত করা হয়েছি কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবেন গোয়েন্দারা। এই গোটা পদ্ধতিকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয় ‘ডিব্রিফিং’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিমান সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেরা এবং ডাক্তারী পরীক্ষায় নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম প্রমাণ না করতে পারলে, আর কোন দিনই হয়ত যুদ্ধবিমানে সওয়ার হতে পারবেন না অভিনন্দন। সে ক্ষেত্রে ডেস্কের কাজে বসিয়ে দেয়া হতে পারে তাকে। তবে তার সঙ্গে কোন রকম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে না। খেয়াল রাখা হবে, কোন পরিস্থিতিতেই তাকে যেন অসম্মানিত হতে না হয়।