‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’ গত শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম অধিবেশনের পর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হয় কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশন থেকে আগামী তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এবারের কাউন্সিলে দশমবারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।
ওবায়দুল কাদের তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত নেতৃত্বকে আমাদের অভিনন্দন।
দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আসতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। আদর্শবাদী, উদারনৈতিক এই রাজনৈতিক দলটির অস্তিত্ব বিনাশের চেষ্টাও হয়েছে। দলের ভেতরের কোন্দলও অনেক সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেয়েছে। কিন্তু আলোর পথযাত্রী আওয়ামী লীগ সব বাধাবিপত্তি মাড়িয়ে এগিয়ে গেছে। জনগণকে সংগঠিত করে পথ চলেছে।
পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে বাঙালির বড় বড় অর্জন এসেছে এই দলটির নেতৃত্বে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকা আওয়ামী লীগ ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের রাজনীতিতে মুসলিম লীগের কবর রচনায় নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তি সনদ ছয় দফা ঘোষণার ভেতর দিয়ে পাকিস্তানের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সেদিনের রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা শব্দটি বাঙালির প্রাণের শব্দে পরিণত করতে পেরেছিলেন। দেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ। আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধÑবাঙালির মহত্তর সব অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। দেশের মানুষকে নতুন পথের দিশা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
স্বাধীন বাংলাদেশেও এ দলটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার নানা রকম অপচেষ্টা হয়েছে। পাকিস্তান আমলের মতোই দলটির নেতাকর্মীদের ওপর জেলজুলুম চালানো হয়েছে। কিন্তু দিশা হারায়নি আওয়ামী লীগ। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা হাল ধরার পর নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দলটি। সামরিক শাসনের অবসানে বাংলাদেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা নতুন করে প্রবর্তনের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগের বর্তমান শাসনামলে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে আলোচিত। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্টÑএমন স্বপ্নও জাতিকে আওয়ামী লীগ দেখাচ্ছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল, যে দলের কাছে গণমানুষের আকাক্সক্ষা সব সময় বেশি। জাতীয় সংকটে এ দলটি সব সময় মানুষের পাশে থেকেছে। স্বাভাবিকভাবেই দলটির কাছে মানুষের প্রত্যাশা বাড়ছে। গত শনিবার দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, জাতির পিতার স্বপ্ন ইনশাআল্লাহ আমরা পূরণ করব।’ সংগ্রামের ইতিহাসে সমৃদ্ধ আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নত করতে বা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা যে কার্যকর ভ‚মিকা রাখে তা প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ।