কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকার বিচার ব্যবস্থা দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস মামলার আসামি না হলেও তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ড. মোশাররফ। তিনি বলেন, ‘শুধু তাই নয়, আমাদের গণসমাবেশ ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বর্বরোচিত ক্র্যাকডাউন চালিয়েছে, যা স্বাধীন বাংলাদেশে কেউ চিন্তা করতে পারে না। অফিসে লুটপাট ও তছনছ করেছে। প্রায় সাড়ে চারশ নেতাকর্মীকে একসঙ্গে গ্রেপ্তার করেছে। তারা ঢাকাসহ সারাদেশে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারপরও আমাদের গণসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি।’
জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে গণসমাবেশ সফল করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘সরকার তাদের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী দিয়ে গণসমাবেশ বানচাল করতে চেয়েছিল। রাস্তায় অবরোধ ও পরিবহন ধর্মঘট করেছে। নয় জনের বেশি কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। তবুও কিন্তু আমাদের বিভাগীয় ও ঢাকার গণসমাবেশ পÐ করতে পারেনি। বরং জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সরকার গায়ের জোরে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। মধ্যবিত্তরা দরিদ্র হয়ে গেছে। সেজন্য জনগণ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। বিচার ব্যবস্থা দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করেছে। তারা বিচার বিভাগ মেরামত করতে পারবে না। অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ছয় শতাধিক নেতাকর্মী গুম করেছে। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ শত শত নেতাকে গুম করেছে। সবার নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।’
‘আজকে জনগণ আওয়াজ তুলেছে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। সেজন্যই আমরা জনগণের পক্ষে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোসহ দশ দফা দাবি ঘোষণা করেছি’ যোগ করেন মোশাররফ। তিনি বলেন, ‘আজকে মানুষ মাঠে নেমেছে। ২৪ ডিসেম্বর পুলিশ সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় বাধা দিয়েছে। পঞ্চগড়ে আবদুর রশিদ নামে একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। তবুও কিন্তু গণমিছিল ঠেকাতে পারেনি।’
এসময় ঢাকায় ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিল সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘সফলতা দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। জনগণের সম্মিলিত আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকারকে জনগণ বিদায় করবে।’
‘অতীতে স্বৈরাচার এরশাদ, আইয়ুবকে জনগণ বিদায় দিয়েছে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার জনগণ সেখানে তাদের স্বৈরাচার সরকারকে বিদায় করেছে’ উল্লেখ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত হয়ে রাজপথে নেমেছে। তারা বলছে, এই নব্য স্বৈরাচার ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। তাদের সময় শেষ। আমরা সকল দেশপ্রেমিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটাব ইনশাআল্লাহ।’
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও দপ্তর সম্পাদক ডা. মো. ফখরুজ্জামান ফখরুলের পরিচালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এমএ সেলিম, ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ডা. মেহেদী হাসান, ডা. সায়ীদ মেহবুব উল কাদির, ডা. শেখ ফরহাদ, ডা. আনোয়ার হোসেন মুকুল, এ্যামট্যাবের বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের বিলকিস জাহান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের গোলাম মাওলা শাহিন প্রমুখ।
মানববন্ধনে চিকিৎসকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ডা. এরফানুল হক সিদ্দিকী, ডা. মো. জাফর ইকবাল, ডা. নিলোফা ইয়াসমিন, ডা. ফকির ওয়ালিদ শাহ, ডা. মো. আদনান হাসান মাসুদ, ডা. মো. জিয়াউর রহমান, ডা. মো. আবু নাসের, ডা. এরশাদ আহসান সোহেল, ডা. খলিলুর রহমান, ডা. একে আজাদ, ডা. মামুন, ডা. সালাউদ্দিন আল আজাদ সোহাগ, ডা. মশিউর রহমান কাজল, ডা. সিফাত, ডা. আরাফাত রহমান পাভেল, ডা. মাসুদ রানা, ডা. লাবিদ রহমান প্রমুখ।