কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করে আমরা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের গ্রামের মানুষ যাতে পায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি, ইনশাল্লাহ আমরা সফল হব।
শুক্রবার বিকেলে টুঙ্গিপাড়ায় হোয়াইট হাউসে আওয়ামী লীগের যৌথসভার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন। এর আগে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিকভাবে সাংগঠনিক সফর শুরু হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য আমরা কর্মসূচী গ্রহণ করেছি। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও উদ্যোগ নিয়েছে। মুজিববর্ষ ঘিরে মানুষের উৎসাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে হত্যাকারীরা তার নাম মুছে দিয়েছিল। আজকে সেই নামটি আবার উচ্চারিত হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম আর কখনও কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। কারণ জাতির পিতা সারাটি জীবন সংগ্রাম করেছেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি কাজ করেছেন। এ দেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য তিনি কাজ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার সুদীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ, দুই লাখ মা-বোন আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের আত্মত্যাগকে অর্থবহ করে তুলতে হবে। তাদের আত্মত্যাগকে আমরা বৃথা যেতে দেব না। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে জাতির পিতার কন্যা বলেন, এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে। আপনারা জানেন, এরই মধ্যে দেশের দারিদ্র্যহার ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মনে করি, আজকে যে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি অর্থনৈতিকভাবে এবং সেই সকল অর্জনের সুফল একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের গ্রামের মানুষ যেন পায় সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মীকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। এ বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র্য মুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব এটিই আমাদের মূল লক্ষ্য।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকার কারণে দলের কয়েকজন নেতা জাতির পিতার সমাধিতে টুঙ্গিপাড়া যেতে পারেননি তার কারণও জানান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে যারা কাজ করছেন, তাদের যাওয়ার দরকার নেই। যারা বাকি থাকবেন তাদের নিয়ে আবার আসব। পরবর্তীতে নোটিস নিয়ে ওয়ার্কিং কমিটির সভা করা হবে বলেও জানান তিনি। আজকে যেহেতু বেশি সময় নেই, পরে আবার বসব।
এরপর উপস্থিত সকল নেতার প্রতি ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হোয়াইট হাউস থেকে সাড়ে ৩টার দিকে বের হয়ে হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। এর আগে, সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেখানে দোয়া-মোনাজাত করা হয়। এরপর হোয়াইট হাউসে যৌথসভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রীকে। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে এলাকায় পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে জাতির পিতার সমাধির পাশে বসে কোরান তেলাওয়াত করেন। টুঙ্গিপাড়া এলে প্রতিবারই বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের পাশে বসে কোরান তেলাওয়াত করে দোয়া করেন তিনি। দুপুর ১টায় জাতির পিতার সমাধি সৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে দলীয় সভানেত্রী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিহত সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এ সময় সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক অনারগার্ড অনার প্রদান করা হয়। জুমার নামাজের পর আওয়ামী লীগের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির যৌথ সভা শুরু হয়।
ফেরি ভাড়া দিয়ে নদী পার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বহরের সাধারণ যাত্রীদের মতোই ফেরি ভাড়া দিয়ে নদী পার হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের গাড়ি বহর। গাড়ি বহরে ৬টি গাড়ি ছিল। আওয়ামী লীগে দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, মাওয়ার শিমুলিয়া- কাঁঠালবাড়ী ঘাট পারাপার হওয়ার জন্য সাধারণ যাত্রীর মতো নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে নদী পার করেছে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের বহনকারী ছয়টি বাস। প্রতিটি বাসের জন্য ২ হাজার ১০ টাকা ভাড়া দেয়া হয়েছে। রাতেই কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় ফিরে আসেন।