বাড়ির মালিকদের কর

20

প্রতিরক্ষা, জননিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়নসহ অনেক কাজে রাষ্ট্রকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়। রাষ্ট্রের জন্য সেই অর্থ সংগৃহীত হয় কাস্টমস, ভ্যাট, ট্যাক্স ও অন্যান্য ফির মাধ্যমে। উন্নত দেশগুলোতে কর প্রদানকে নাগরিক দায়িত্ব মনে করা হয়। আমাদের দেশের চিত্র তার উল্টো।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে কর প্রদানের যোগ্য দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ কর দেয় না। উন্নত দেশ তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে কর আদায়ের হার সবচেয়ে কম। সংগত কারণেই আমাদের উন্নয়নের গতি ধীর এবং নাগরিকসেবা প্রাপ্তি আশানুরূপ নয়। আর এই পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী আমাদের রাজস্ব বিভাগের দুর্বলতা।
প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় থাকা বহু বাড়ির মালিক বাড়িভাড়ার আয় থেকে কোনো করই দেন না। কর এড়াতে ভাড়াটিয়াকে তাঁরা ভাড়ার রসিদও দেন না। আইনে বাড়িভাড়ার অর্থ মালিকের হাতে না দিয়ে ব্যাংক হিসাবে প্রদানের কথা বলা হলেও সেই আইনের বাস্তবায়ন নেই। ফলে মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করেও একজন বাড়ির মালিক কোনো কর দেন না। অন্যদিকে একজন চাকরিজীবী বাড়িভাড়ার জন্য বেতনের অর্ধেক টাকা দিয়ে বাকি টাকায় সন্তানের লেখাপড়াসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে হিমশিম খান, তাঁকে ঠিকই আয়কর দিতে হচ্ছে। দিনে একবেলা খাবার জোটাতে কষ্ট হয়, এমন দরিদ্র মানুষকেও ভ্যাট দিতে হয়। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এসব কারণে সমাজে ক্রমেই বৈষম্য বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, কর আদায়ে সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বিত পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। আছে রাজস্ব আদায়কারীদের সীমাহীন দুর্নীতি। কর আদায়ে জটিল পদ্ধতি অনুসরণ, করদাতাদের হয়রানি করাসহ অন্যান্য কারণেও কর প্রদানে মানুষ নিরুৎসাহ হয়। কেন ঢাকার প্রত্যেক বাড়ির মালিকের আয়কর নথি থাকবে না? বাড়ির মালিকদের সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হয়। সে সময় হালনাগাদ আয়কর রিটার্নের সনদপত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। ব্যাংক হিসাবে ভাড়া প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে। শুধু বাধ্যতামূলক করলেই হবে না, সেখানে পুরো ভাড়া জমা হচ্ছে কি না তা তদারকি করতে হবে। ফাঁকি থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমরা চাই, বাড়ির মালিকসহ সারা দেশে যাঁরাই করযোগ্য আয় করেন তাঁদের প্রত্যেককে আয়কর জালের মধ্যে নিয়ে আসা হোক।